সামনেই দুর্গাপুজো, বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। তার আগেই বাংলার মানুষের জন্যে নতুন উপহার নিয়ে এলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে নতুন জনমুখী প্রকল্প রাজ্য সরকারের। নতুন প্রকল্পের নাম “শ্রমশ্রী প্রকল্প”। সম্প্রতি নবান্ন থেকে এই প্রকল্পের নাম ঘোষণা করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের “কন্যাশ্রী”, “রূপশ্রী”, “লক্ষ্মীর ভান্ডার”, “কৃষক বন্ধু”, “জয় জোহর”, “তরুণের স্বপ্ন” ও “তপশিলী বন্ধু” প্রকল্পে উপকৃত হচ্ছেন বাংলার কোটি কোটি মানুষ। দেশ ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এই প্রকল্প গুলির সুনাম। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল “শ্রমশ্রী প্রকল্প”।
বাংলার অনেক মানুষ কাজের জন্য অন্য রাজ্যে থাকেন। পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে তারা বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা মূলত সোনার কাজ, জড়ির কাজ, নির্মাণকাজ, ফার্নিচারের কাজ ও দোকানের কাজে সাথে যুক্ত। রাজ্যের প্রায় কয়েকলক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্র, কেরালা, গুজরাট, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ সব বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন।
ভারতের এই সমস্ত রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকের উপর অত্যাচার চলছে। বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের বাংলাদেশী হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের মারধর করা হচ্ছে ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনকি, বাংলাদেশী দাগিয়ে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। বাংলার লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের উপর এই অমানবিক অত্যাচারে আতঙ্কিত পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবার। এই আতঙ্কে অনেকেই বাংলায় ফিরে আসতে চাইছেন। এমনকি, এরজন্য অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বাইরের রাজ্যে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের স্বার্থেই এই নতুন প্রকল্প “শ্রমশ্রী”। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের রাজ্যে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন দেওয়ার এই প্রকল্প।
আরোও পড়ুন:- প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ২.০ প্রকল্প, বাড়ি তৈরির জন্য সরকারি সহায়তা।
এই প্রকল্পের সুবিধা গুলি হল:- এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের মাসিক ৫০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। এই টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হবে। যতদিন তারা রাজ্যে ফিরে তারা কাজ পাচ্ছেন না, ততদিন ভাতা চলতে থাকবে। সেই সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের “উৎকর্ষ বাংলা” প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হবে যেমন – ড্রাইভিং, ট্রেলারিং, মেকআপ আর্টিস্ট, পোল্ট্রি হ্যাচারি, মেকানিক ও ইলেকট্রিকের কাজ ইত্যাদি। তারপর ট্রেনিং শেষে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের অধীনে পরিযায়ী শ্রমিক ও তার পরিবার রাজ্য সরকারের ” খাদ্যসাথী” ও “স্বাস্থ্যসাথী” প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এমনকি ,পরিযায়ী শ্রমিকদের জব কার্ডের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজে কাজ দেওয়া হবে।তাছাড়া , রাজ্যে ফিরলে পরিযায়ী শ্রমিকের সন্তানদের রাজ্যের স্কুলে পড়াশুনার সব রকম ব্যবস্থা করা হবে।
এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:- আবেদনকারীকে অবশ্যই পরিযায়ী শ্রমিক হতে হবে। আবেদনকারীকে পরিযায়ী শ্রমিককে অবশ্যই বাংলায় ফিরে আসতে হবে। করোনা মহামারীর সময় রাজ্যের কাছে নথিভুক্ত ২২ লক্ষ ৪০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় নাম নথিভুক্ত থাকতে হবে। তবে নতুন পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম ঐ তালিকায় নথিভুক্ত করার সুযোগ দিতে পারে সরকার।
এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি গুলি হল:- আবেদনকারীর আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, কোম্পানি দ্বারা প্রদত্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র, ব্যাংক একাউন্ট, শিক্ষা সম্পর্কিত সার্টিফিকেট, রাজ্যে স্থায়ী বাসিন্দা সার্টিফিকেট, ইনকাম সার্টিফিকেট, মোবাইল নং এবং রাজ্য সরকারের কাছে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে নথিভুক্ত থাকার প্রমাণপত্র।
এই প্রকল্পের পিছনে সরকারের উদ্দেশ্যগুলি হল:- রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্য ফিরিয়ে আনা। বাইরের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্মাণ অত্যাচারের মোকাবিলা করা। পরিযায়ী শ্রমিক ও তার পরিবারের মন থেকে ভয়ের আতঙ্ক দূরীকরণ করা। বাংলায় কর্মসংস্থান তৈরি করে নিজের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের সুব্যবস্থা করা। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা। পিছিয়ে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা।
এই প্রকল্পে আবেদন করার পদ্ধতি হল:- এই প্রকল্প সবে ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই প্রকল্পে আবেদনের সমস্ত নিয়ম জানিয়ে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে। এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একটি অনলাইন পোর্টাল খোলা হবে। সেই পোর্টালের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা।

