অল্প মূলধন কাজে লাগিয়ে মোটা টাকা লাভের কথা ভাবছেন? বাড়িতে বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে আয় করার উপায়।

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে ঘরে বসে অল্প মূলধন দিয়ে, আপনার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মাস গেলে মোটা টাকা আয়ের অনেক রকম উৎস এসে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে চাকরির জন্য অপেক্ষা করার থেকে আপনি যদি নিজে কোন ছোট ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে অনেকটাই অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পাবেন। অনেক ব্যক্তি মনে করেন ব্যবসা শুরু করতে গেলে অনেক মূলধনের দরকার। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য নয়।
আজকের এই প্রতিবেদনে বেশ কিছু ব্যবসা সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে, যেগুলি কম মূলধনের মধ্যে আপনি শুরু করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র পুরুষ নয়, একজন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে তাল মিলিয়ে চাকরি বা ব্যবসা করছেন। এমন অনেক গৃহবধূ রয়েছেন, যারা এই ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে মাস গেলে মোটা টাকা আয়ের সুযোগ খুঁজে নিয়েছেন। আপনিও কি এমন কোন কাজের সন্ধান করছেন, তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।

১) অনলাইন টিউটরিং :- বর্তমান যুগে অনলাইন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রকম কাজ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো অনলাইন টিউটরিং। ডিজিটাল যুগে অনলাইন মাধ্যমে আপনি শিক্ষাদান করতে পারেন। বিশেষ করে করোনার সময় এই অনলাইন পড়াশুনা প্রাধান্য পায়। এরপর থেকেই এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে অনেকেই অনলাইন টিউটরিং করছেন। অনলাইন টিউটরিং এর জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ করার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন হয় সেগুলি হল :- একটি কম্পিউটার, একটি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং পড়ানোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। আপনি গণিত, বিজ্ঞান, ভাষার মতো বিষয়গুলিতে অথবা কোডিং বা গ্রাফিক ডিজাইনের মতো বিশেষ দক্ষতার উপর একের পর এক সেশন বা গ্রুপ ক্লাস অফার করতে পারেন। এ কাজের জন্য শুরুতে খরচ অনেকটাই কম এবং শিক্ষার যেহেতু চাহিদা রয়েছে বিশেষ করে অনলাইন টিউটোরিয়াল একটি লাভজনক ব্যবসা।

২) হোম বেকারি :– যদি আপনার বেকিংয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে এটিকে একটি ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে পারেন। এখন বিভিন্ন জায়গায় অল্প খরচেই কেক বানানোর ট্রেনিং দেওয়া হয়। আপনিও যদি এই ব্যাপারে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে ট্রেনিং নিয়ে কেক বানানো শিখে নিজের বাড়িতেই বেকারি গড়ে তুলতে পারেন। প্রাথমিকভাবে যে জিনিসগুলোতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন পড়বে সেগুলি হল – বেসিক বেকিং সরঞ্জাম, উপকরণ এবং প্যাকেজিং উপকরণ। স্থানীয় গ্রাহকদের কাছে বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘরে তৈরি কেক, কুকিজ, মাফিন বা রুটি বিক্রি করুন। এই ব্যবসার ওভারহেড খরচ কম এবং কাস্টমাইজড বা বিশেষ বেকড পণ্যের জন্য প্রিমিয়াম মূল্য চার্জ করার সুবিধা রয়েছে।

৩) হস্তনির্মিত কারুশিল্প ব্যবসা :- সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে অনেক সময় আমরা দেখতে পাই এমন কিছু পেজ রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের হাতের তৈরি কারুকার্য জিনিস দেখাচ্ছে এবং পছন্দ হলে তাদের স্ক্রিনে দেওয়া নাম্বারে কন্টাক্ট করে কিনতে বলছেন। এমনও তো হতে পারে আপনিও এমন হস্ত নির্মিত বিভিন্ন জিনিস বানাতে পারদর্শী। অথচ একটা ঠিকঠাক প্লাটফর্ম পাচ্ছেন না বলে, আপনার এই পারদর্শিতাকে কাজে লাগাতে পারছেন না। যে সমস্ত ব্যক্তি হস্ত নির্মিত শিল্প বানাতে পারদর্শী, তাদের জন্য এই ব্যবসা অনেকটাই উচ্চ লাভজনক ব্যবসা। আপনি বাড়িতে বসেই গয়না, মোমবাতি, চিত্রকর্ম, বা বোনা জিনিসপত্র যাই হোক না কেন সোশ্যাল মিডিয়ার মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটি পেজ তৈরি করে অথবা স্থানীয় শিল্প মেলায় আপনার সৃষ্টি বিক্রি করতে পারেন। এই ব্যবসায় ব্যবহৃত উপকরণগুলো দাম অনেক কম তাই এই ব্যবসার জন্য প্রথমেই বেশি মূলধনের প্রয়োজন পড়ে না।

৪) ফটোগ্রাফি ব্যবসা :-যদি আপনার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে ফটোগ্রাফি ব্যবসা থেকে আপনি আয়ের উৎস খুঁজে পেতে পারেন। আপনি বিবাহ, অনুষ্ঠান, প্রতিকৃতি, পণ্য ফটোগ্রাফি, এমনকি স্টক ফটোগ্রাফির কাজ অনায়াসে করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বর্তমানে বিভিন্ন অকেশনে কফি মগ, ফটো ফ্রেম এর ওপরে বিভিন্ন ব্যক্তির ফটো দিয়ে উপহার দেওয়া খুব চল রয়েছে। আপনি যদি ফটোগ্রাফির ব্যবসা করেন তাহলে অকেশনে অনেকটা লাভ করতে পারবেন।

৫) টিফিন সার্ভিস :- যারা রান্না করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য টিফিন সার্ভিস একটি চমৎকার ব্যবসার উৎস হতে পারে। আপনি বিভিন্ন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাবার তৈরি করে সেগুলি সরবরাহ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
বিশেষ করে বর্তমানে হোম ডেলিভারির প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে। আপনি এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারেন আপনার ব্যবসার প্রচারের মাধ্যমে হিসাবে।

৬) ডেটা এন্ট্রির কাজ :- বিনা বিনিয়োগে যারা অনলাইন কাজ খুঁজছেন তাদের জন্যে ডেটা এন্ট্রি হলো অন্যতম মাধ্যম। আপনি যদি ভালো লেখালেখি জানেন কিংবা এডিট কাজ জানেন তাহলে পার্ট টাইম কাজ করতে পারবেন।
এই ধরনের কাজ করার জন্য আপনার কাছে থাকতে হবে একটি ল্যাপটপ এবং থাকতে হবে কম্পিউটার সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান। বাড়িতে বসে কাজ করে আপনি প্রতি ঘন্টায় ৩০০ থেকে ৩ হাজার টাকা রোজগার করতে হয় সুযোগ পাবেন।

৭) ট্রাভেল এজেন্সি :- প্রত্যেকটি মানুষ অবসর সময়ে ঘুরতে যেতে পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যস্ততার জন্য ভ্রমণ ট্যুর কিভাবে পরিকল্পনা করবেন সেটা সময় নিয়ে করে উঠতে পারেন না। এজন্য সেরা ভ্রমণ পথের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এবং মানুষের ভ্রমণ গন্তব্যকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য বিভিন্ন পর্যটন এজেন্সি রয়েছে, যারা আপনাকে অল্প দিনের মধ্যে একটা সুন্দর ট্যুর গাইড আপনাকে দিয়ে দেবে। আপনিও যদি এরকমই ট্রাভেল এজেন্সির করতে পারেন তাহলে অল্প বিনিয়োগ করে ভালো ব্যবসা দিতে পারবেন। তবে এই ব্যবসা যাওয়ার জন্য পর্যটন ব্যাপারে আপটুডেট থাকতে হবে।

৮) কুরিয়ার সার্ভিস :- লজিস্টিক এমন একটি পরিষেবা যা সারা বছর ধরে ব্যবসা করে। কর্মীদের নিয়োগ করুন, একটি সেটআপ করুন এবং আপনি আপনার কুরিয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১০) ফ্রিল্যান্সিং :– বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ একটি অন্যতম প্যাসিভ ইনকাম। বর্তমানে অনেক পুরুষ ও মহিলা এই কাজের মাধ্যমে পূর্ণ ক্যারিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আপনি যেকোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি। এর জন্য আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন , ডিজিটাল মার্কেটিং ,ভিডিও এডিটিং , ওয়েব ডেভলপমেন্ট শিখে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।


ইউটিউবে ব্লগ করে :- আপনার যদি ব্লগ করার আগ্রহ থাকে, ছোট ছোট মুহূর্তকে ক্যাপচার করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে আপনার এই ইচ্ছেটুকুই আপনাকে অনেক জনতার কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে এই সোশ্যাল মিডিয়া। আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবন বা ভ্রমণ ভিডিও কিংবা রান্নার ভিডিও বা গার্ডেনিং এর ভিডিও করে ইউটিউবে একটি পেজ করে সেখানে প্রতিদিন দিতে থাকেন এবং তার সাথে আপনার কিছু মূল্যবান বক্তব্য বা আপনার ভালো লাগার কথা শেয়ার করেন, আপনার এই ভিডিও যত মানুষের কাছে পৌঁছাবে অর্থাৎ ভিউজ বাড়লে ইউটিউব এর পক্ষ থেকে আপনি মাসে আয় করার সুযোগ পাবেন।

উপরে বর্ণিত এই ব্যবসাগুলো সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া হল, সেই ধারণা কাজে লাগিয়ে আপনি কম মূলধন দিয়েও একটি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আপনি যদি ব্যবসার লাইনে প্রথম হন তাহলে কম মূলধন দিয়ে ছোট ব্যবসা শুরু করে আস্তে আস্তে বড় হওয়ার দিকে অগ্রসর হবার জন্য এটাই সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি মাধ্যম যেটাকে আপনি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে কাজে লাগালে আপনার ব্যবসা অনেকটাই ব্যাপকতা পেতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

Join Group Join Group