পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি যেটি নাগরিকত্ব প্রমাণে সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য জাতীয়তা এবং আইডেন্টিটি প্রুফের জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। এছাড়া বিদেশের ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের জন্য পাসপোর্ট দরকার হয়। এছাড়াও আপনি যদি বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরির জন্য আবেদন করেন এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই পাসপোর্ট চার রকমের হয়। চার রকম পাসপোর্টে রং চার রকম। আপনি কি জানেন কোন কোন রংয়ের পাসপোর্ট আছে? কোন পাসপোর্ট এর কাজ কি? নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কোন পাসপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে? এই সমস্ত বিষয়ে যদি আপনার ধারণা না থাকে তাহলে এ প্রতিবেদনটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে পাসপোর্ট এর শ্রেণীবিন্যাস এবং পাসপোর্ট এর কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে। জানতে হলে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
সম্প্রতি শুরু হয়েছে ভোটার কার্ডের সংশোধন প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে মানুষের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে পাসপোর্ট নিয়ে। অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না কোন পাসপোর্ট নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আপনার যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর থাকছে আজকের এই প্রতিবেদনে।
সাধারণত ভারতে চার রকমের পাসপোর্ট দেওয়া হয়। এই চারটি রকমের পাসপোর্ট চার রকমের হয়ে থাকে। যথা : লাল, নীল, সাদা এবং কমলা।
নিম্নে প্রত্যেক ধরনের পাসপোর্ট সম্বন্ধে এবং তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :-
১) নীল পাসপোর্ট :- ভারতের সবথেকে বেশি ব্যবহারকৃত পাসপোর্ট হল এই নীল পাসপোর্ট। এটি সাধারণ নাগরিকদের জন্যই ইস্যু করা হয়। পড়াশুনার ক্ষেত্রে, ব্যবসার জন্য, ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এই পাসপোর্ট ব্যবহার করেন সাধারণ নাগরিকরা। বর্তমানে নীল পাসপোর্ট ই-পাসপোর্ট রূপে ইস্যু করা হচ্ছে। এর মধ্যেও একটি বায়োমেট্রিক চিপ যুক্ত করা হয়। এর ফলে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়।
ভারতের নাগরিকদের এই পাসপোর্ট পেতে হলে আধার কার্ড, ঠিকানার প্রমাণ, জন্ম সনদ, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ডকুমেন্ট শো করতে হবে।
২) সাদা পাসপোর্ট :- এই পাসপোর্ট মূলত সরকারি দায়িত্বে থাকা এবং সরকারি কাজে নিযুক্ত থাকা নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা হয়। বিশেষ করে যদি কোন ব্যক্তি রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের কর্মী হয় এবং বিদেশ সফর করতে হয় যাদের এছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনীদের এই পাসপোর্ট দেওয়া হয়। এই সাদা পাসপোর্ট পেতে হলে ফরওয়ার্ডিং লেটার, দায়িত্ব সনদপত্র, সরকারি পরিচয় পত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পত্র এই ডকুমেন্টগুলো থাকতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ- টিসিএসের কর্মীদের জন্য সুখবর, কোম্পানি পক্ষ থেকে বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা।
৩) লাল পাসপোর্ট :- লালবা মেরুন রং এর পাসপোর্ট দেওয়া হয়ে থাকে কূটনীতিক বা উচ্চপর্যায়ের সরকারি আধিকারিকদের জন্য। এই পাসপোর্ট ব্যবহারকারীরা সরকারি অনেক বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়াকরণ, ভিসা মুক্ত ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক সম্মান ইত্যাদি। এই পাসপোর্ট শুধুমাত্র সরকারি অনুমোদিত ব্যক্তি এবং বিশেষ কারণে তাদের পরিবারের ব্যক্তিদের জন্য ইস্যু করা হয়ে থাকে। এই পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য অনেক কঠোর প্রক্রিয়াকরণ এবং যাচাইকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
৪) কমলা পাসপোর্ট :- কমলা পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় সাধারণত ECR ক্যাটাগরির নাগরিকদের জন্য। যে সমস্ত ব্যক্তি একটু কম পড়াশোনা জানা এবং যারা শ্রমিক হয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যায়, তাদের জন্য বিশেষ কমলা পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এই পাসপোর্ট পেতে হলে ব্যক্তিকে অনেক কঠোর নিয়ম-কানুন এবং প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
কেন এই পাসপোর্ট এর শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে :- পাসপোর্ট এর এই শ্রেণীবিন্যাস করার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত হতে পারে। ইমিগ্রেশন কর্মীরা সহজে বুঝতে পারেন কোন ব্যক্তি কোন কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমন করতে চাইছে। এর ফলে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া খুব সহজ হয়।
আধুনিক ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তি:-
বর্তমানে সব ধরনের পাসপোর্ট ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। এর ফলে বিদেশ ভ্রমণ অনেক সুরক্ষিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে থাকে। পাসপোর্ট এর মধ্যে থাকা বায়োমেট্রিক চিপ ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে পাসপোর্ট জালিয়াতি হার কমে এবং ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়।
পাসপোর্ট এর এই বিভিন্ন ধরনের শ্রেণিবিন্যাস করা মাধ্যমে শুধুমাত্র ভারত সরকারের সুবিধা নয়, এতে নাগরিকদের পরিচয় সুরক্ষিত করা যায় এবং তাদের কাজের বা উদ্দেশ্যের কারণ জানা যায়। তবে জানিয়ে রাখি, ভারতের এই চারধনের পাসপোর্ট প্রত্যেকটি নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। চার ধরনের পাসপোর্ট করার একটাই কারণ যাতে প্রত্যেক ব্যক্তির আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্যই করা হয়েছে।