সরকারি সমস্ত পরিষেবা এখন ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যমে হওয়ার ফলে কাজকর্মের ধরন অনেক দ্রুত এবং সহজ হয়ে গিয়েছে। এবার থেকে দুর্গাপূজার জন্য অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়া অনলাইন মাধ্যমে শুরু হয়ে গিয়েছে। শারদ উৎসব আসতে কয়েক দিনের অপেক্ষা মাত্র। শুধু শারদ উৎসব নয়, এরপর আস্তে আস্তে একের পর এক উৎসব দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। বাঙালির সবথেকে শ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গা পূজা মানেই প্যান্ডেল, আলোর সজ্জা, এবং মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। এইজন্যই সমস্ত উৎসবকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সরকারের তরফ থেকে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজ ও দ্রুত করার জন্য অনলাইন একটি অ্যাপ চালু করেছেন। ‘আসান’ (www.aasan.wb.gov.in) নামে এই অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আপনি সরকারের তরফ থেকে পুজোর জন্য অনুমতি পেয়ে যাবেন। এই বছর, ২৯শে আগস্ট থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পোর্টালে আবেদন করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক কিভাবে অনলাইন মাধ্যমে দুর্গাপূজার অনুমতির জন্য আবেদন করবেন :-
নতুন এবং পুরনো পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন নিয়ম করা হয়েছে।
যারা প্রথমবার এই পোর্টালে আবেদন করবেন, তাদের নাম, ইমেল, ফোন নম্বর এবং জেলা সহযোগে সাইন আপ করতে হবে। এরপর একটি ওটিপি (OTP) আসবে, সেটা ভেরিফিকেশন করার মাধ্যমে আপনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। যারা এর আগেও রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন এই পোর্টালে, তাদের নতুন করে সাইন আপ করতে হবে না। আগের বছর রেজিস্ট্রেশন করার সময় যে ফোন নম্বর এবং ওটিপি ব্যবহার করে লগইন করেছিলেন, সেগুলো ইনপুট করলেই আপনার তথ্যগুলি অটোমেটিক্যালি চলে আসবে। তবে যদি আপনার আগের নম্বর এখন চালু না থাকে তবে ‘Change Request’ অপশন করে নতুন নাম্বার ইনপুট করতে হবে।
আবেদন করার ৫ টি পর্যায় রয়েছে। প্রত্যেকটি পর্যায়ে আপনাকে সঠিক তথ্য ব্যবহার করে আবেদন করতে হবে।
প্রথম পর্যায় :- উৎসবের বিবরণ অপশনে এসে হিসেবে এখানে দুর্গাপূজা নির্বাচন করুন। এরপর পূজার ঠিকানা অর্থাৎ যদি যেখানটায় অনুষ্ঠিত হবে, জেলা, ব্লক, নিকটতম ফায়ার স্টেশন, শুরুর তারিখ এবং বাজেট উল্লেখ করুন।
এরপর ক্লাবের নাম, যে থিম করবেন সেই থিমের নাম, সাব ডিভিশন, পোস্ট অফিস, এবং পিন কোড অ্যাড করুন।
এরপরে ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, গ্রাম পঞ্চায়েত বা ওয়ার্ডের নম্বর, উৎসব শেষের তারিখ এবং বিদ্যুতের উৎস উল্লেখ করুন।
আরোও পড়ুন:- কানাড়া ব্যাংক স্কলারশিপের ২০২৫, যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া এবং সুবিধা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত!
দ্বিতীয় পর্যায় :- আয়োজকদের বিবরণ
এই পর্যায়ে পূজো কমিটির আয়োজকদের নাম এবং তাদের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারির নাম, বাবার/স্বামীর নাম, ইমেল আইডি এবং ফোন নম্বর দিতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তারিখ, ভলান্টিয়ারের সংখ্যা এবং কতজন সেলিব্রিটি আসবেন তা উল্লেখ করুন।
মূর্তির উচ্চতা এবং বিসর্জনের শোভাযাত্রার তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ করতে হবে।
অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ঘোষণাগুলিতে সম্মতি দিয়ে হবে।
তৃতীয় পর্যায় :- জমির তথ্য
পূজাটি ব্যক্তিগত, সরকারি না কি অন্য কোনো জমিতে করা হচ্ছে তা উল্লেখ করুন।
ব্যক্তিগত জমি হলে, জমির মালিকের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) শো করতে হবে। মালিকের নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
চতুর্থ পর্যায়:- বিদ্যুতের তথ্য
গত বছরের পূজার বিদ্যুৎ মিটারের কনজিউমার নম্বর এবং অনুমোদিত লোড (kW) উল্লেখ করতে হবে
বর্তমান পূজার ইলেকট্রিশিয়ানের নাম, লাইসেন্স নম্বর এবং ফোন নম্বর দিতে হবে।
পঞ্চম পর্যায় :- অগ্নি-সম্পর্কিত তথ্য
প্যান্ডেলের ক্ষেত্রফল (বর্গ ফুটে) এবং নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রীর (যেমন – বাঁশ, কাপড়) তালিকা উল্লেখ করতে হবে।
ডেকোরেটরের নাম, ঠিকানা এবং ট্রেড লাইসেন্স নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
অগ্নি নিরাপত্তা, জরুরি গাড়ির প্রবেশাধিকার এবং গেটের মাপ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘোষণাপত্রে সম্মতি প্রদান করতে হবে।
এই পাঁচটি পর্যায়ে সমস্ত সঠিক তথ্য উল্লেখ করে সর্বশেষ কাজ হল প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করা এবং সরকারের তরফ থেকে চূড়ান্ত অনুমতি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
কোন কোন নথি আপলোড করতে হবে:-
১) গত বছরের পূজার অনুমতির NOC কপি (যারা এই বছর প্রথম পুজো করছে তাদের জন্য এই কপিটি লাগবে না)
২) প্যান্ডেলের সাইট প্ল্যান
৩) বর্তমান বছরের জমির NOC
৪)ইলেকট্রিশিয়ানের ডিক্লারেশন ফর্ম
ডেকোরেটরের ডিক্লারেশন এবং সেফটি ডিক্লারেশন
৫)PCB আন্ডারটেকিং
সমস্ত নথিগুলি JPG বা PDF ফরম্যাটে এবং ১০০ KB-র মধ্যে হতে হবে।
নথি আপলোড করার পর, WBSEDCL-এর বিল অনলাইন বা অফলাইনে পেমেন্ট করতে হবে। সমস্ত NOC WBSEDCL এবং ফায়ার ডিপার্টমেন্ট সবুজ হয়ে গেলে আপনি বুঝবেন আপনার পূজার অনুমতি সরকারের দ্বারা গ্রান্টেড হয়েছে।
অনলাইন মাধ্যমে পূজার অনুমতি পত্রের জন্য আবেদন করা শুরু হওয়ার মাধ্যমে যেমন পূজা কমিটির উদ্যোক্তাদের সময় বাঁচবে, তেমনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
তাই এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা সরকারের তরফ থেকে পূজার অনুমতি পত্র পাননি, তারা অবশ্যই নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে অনলাইন মাধ্যমে এই কাজটি সম্পন্ন করুন এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় সব ধর্মের ও বর্ণের মানুষকে নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠুন।