টাকার বিনিময়ে অনলাইন গেম নিষিদ্ধ করার আইন কতটা বৈধ? তিন হাই কোর্ট থেকে মামলা সরিয়ে নেওয়া হলো সুপ্রিম কোর্টে?

বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফোন এসে যাওয়ার পর এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকার ফলে মোবাইল গেমে আসক্তি তৈরি হয়েছে স্কুল স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে বয়সে বড়োদের মধ্যেও। এমনকি এই অনলাইন গেমের আসক্তির হলে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। 

টাকা দিয়ে অনলাইন গেমে এত বাড়বাড়ন্ত কেনো? 

টাকা দিয়ে অনলাইন গেমের বাড়বাড়ন্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো এর থেকে ব্যবসা করার বিশাল সম্ভাবনা, উন্নত প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, এবং মানুষের গেমের প্রতি বিনোদনের চাহিদা। বিভিন্ন গেম কোম্পানিগুলো গেমের ভিতরে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে থাকে, ফ্রি সাবস্ক্রিপশন এর সুযোগ এবং বিভিন্ন ডিভাইসে গেম খেলার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে প্রচুর টাকা আয় করে থাকে। এই গেম দিনদিন আরও বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, সেইসাথে মানুষের মধ্যে এই গেমের প্রতি আসক্তি তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইন গেম বিশ্ববাজারে একটা শিল্পের পরিণত হয়েছে। গেম কোম্পানিগুলো প্রতি বছর এর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে। কিছু দেশ অনলাইন গেমিংয়ে অর্থ লেনদেন নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে ভারত। টাকা দিয়ে অনলাইন গেম খেলার প্রধান পরিণতি হলো গেমের মাধ্যমে নতুন মানুষের সাথে পরিচয় ও বিনোদনের মধ্য দিয়ে গেমের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে, যার ফলে আর্থিক ক্ষতি, প্রতারণা, অর্থ পাচার এবং এমনকি আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতি হচ্ছে। 

আরোও পড়ুনঃ- Meesho অ্যাপ ব্যবহার করে কোন বিনিয়োগ ছাড়াই মাসিক ইনকাম করুন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। জেনে নিন নিয়ম কানুন!

ভারত সরকার এই ধরনের খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি  করেছে এবং ইতিমধ্যে লোকসভায় অনলাইনে টাকা দিয়ে খেলা নিষিদ্ধ করার বিল পাশ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে এই অনলাইন গেমের বারবাড়ন্ত কমতে চলেছে।  

ভারত সরকারের অনলাইন গেম খেলার নিষেধাজ্ঞা আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্ট কর্ণাটক হাইকোর্ট এবং মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের তরফে বিভিন্ন সুবিধার জন্য তিনটি ভিন্ন হাইকোর্টের বদলে শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের মামলাটি শুনানি করার জন্য আবেদন করা হয়। 

প্রসঙ্গত, অনলাইন গেম নিয়ন্ত্রণ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা রয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে বিবেচনা করে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিয়েই শুনানি হতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সংসদে চলতি বছরের বাদল অধিবেশনে দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫ এই বিলটি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিতে আইনি পাশ হয়। আইনটি পাস হওয়ার পরপরই উক্ত তিনটি হাইকোর্টে এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে কেন্দ্রের আবেদন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে একসাথেই তিনটি হাইকোর্টের মামলা করার আর্জি জানানো হয় ভারত সরকারের তরফে। 

কেন্দ্রের তরফ থেকে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন, “ কেন্দ্রের আইনের বিরুদ্ধে তিনটি হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। যদি মামলাগুলি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসা হয়, তবে সময় বাঁচবে।”  এক্ষেত্রে মামলাকারী গেমিং সংস্থাগুলি এই আর্জির বিরোধিতা জানাননি। হলে সুপ্রিম কোর্টেই অনলাইন গেমিং আইন বৈধতা নিয়ে মামলা শুনানি হতে চলেছে। 

ইতিমধ্যে কেন্দ্র এবং মামলাকারী পক্ষের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ মামলাগুলি সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত করার অনুমতি জানিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই এই তিনটি হাইকোর্ট থেকে এই মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সুপ্রিম কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মূলত দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি এবং সময় বাঁচানোর জন্যই তিনটি হাইকোর্টের বদলে শীর্ষ আদালতে মামলাটি করা হচ্ছে। 

এখন দেখা যাক পরবর্তী শুনানিতে অনলাইন গেমের নিষিদ্ধতা বৈধ কিনা সে ব্যাপারে কি ফলাফল উঠে আসে। যদিও ফ্রেন্ডের এই আইনের মধ্য দিয়ে অনলাইন গেম গুলির অর্থের বিনিময়ে খেলার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও এই নিয়ে গেমিং কোম্পানিগুলোর দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। এক গেমিং কোম্পানি কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের এই আইন অনলাইন গেমিং এর প্রমোশন বা প্রচারের কথা উল্লেখ করলেও আদতে এই আইন ভারতে অনলাইন গেম খেলার নিষিদ্ধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানিতে অনলাইন গেমিং বৈধ কিনা সে ব্যাপারে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

Author

  • Bengali Path

    Bengali Path প্রতিদিন আপনাদের জন্য নিয়ে আসে সরকারি চাকরি, সরকারি যোজনা, স্থানীয় খবর ও প্রশিক্ষণ আপডেট। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহজ ভাষায় সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছে দিতে, যাতে আপনারা সব গুরুত্বপূর্ণ খবর সবার আগে পান। Bengali Path-এর সঙ্গে থাকুন, সবসময় থাকুন আপডেট ও এগিয়ে!

Chat on WhatsApp