যা এমন একটি পানীয়, যে পানীয় ছাড়া সকালটা সুন্দর হয় না। শুধু সকাল নয়, বিকেলের আড্ডা এই চা ছাড়া একদম অসম্পূর্ণ। বন্ধু মহলে আড্ডা হোক কিংবা স্টেশনে বসে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন হয়ে যেতে পারে এক কাপ চা, আবার শীতের সন্ধ্যায় শীতকালকে উপভোগ করতে চায়ের বিকল্প হয় না। চা এমন এক পানীয় যেটি আনন্দে, খুশিতে, আড্ডায়,মন খারাপে সকল পরিস্থিতিতে যা আমাদের সঙ্গে একদম মিশে যায়। আপনি যদি চায়ের স্টলের ব্যবসা দেওয়ার কথা অনেকদিন ধরে ভাবছেন, অথচ কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না, তাহলে এই প্রতিবেদনটা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আজকের প্রতিবেদনে চায়ের স্টলের ব্যবসা করে আপনি কিভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন সেই সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য দেওয়া রয়েছে। জানতে হলে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চায়ের দোকান পাওয়া যায় না এমন জায়গা দুষ্কর। কোন জায়গায় আপনি অন্য যেকোন দ্রব্যের দোকান না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন কিন্তু চেনা শহর থেকে শুরু করে চেনা গ্রাম বা অচেনা অজানা গ্রাম এমনকি শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চায়ের দোকান। শুধুমাত্র তা নয় ট্রেনে বাসেও আপনি হকারদের মাধ্যমে চা পেয়ে যাবেন হাতের কাছে।
চায়েরও কত রকম প্রকারভেদ রয়েছে?
কেউ দুধ চা খেতে ভালোবাস, কেউ লিকার চা। কেউ আবার লেবু চা এছাড়াও আরো অন্যান্য অনেক ধরনের চা পাওয়া যায়। ভারতের চা প্রিয় মানুষের অভাব নেই। চায়ের যেহেতু প্রচুর চাহিদা রয়েছে তাই আপনি যদি একটি চায়ের স্টল দিতে পারেন তাহলে এর থেকে অনেক টাকা লাভ করার সুযোগ রয়েছে। প্রথমত এই চা তৈরিতে কোন রকম পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। এছাড়া চায়ের স্টল দিতে গেলে কোনরকম কর্মী রাখার প্রয়োজন হয় না। আপনি একা এই কাজটি করতে পারবেন। এছাড়া চায়ের স্টল দেওয়ার জন্য বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না। সবমিলিয়ে কম মূলধন খাটিয়ে অনেক লাভ করার জন্য একটি উত্তম ব্যবসা হচ্ছে এই চা স্টল। তবে পুরনো ধরনের চায়ের দোকান না দিয়ে যদি আপনি বর্তমান সময়ের আধুনিকতার ছোঁয়ায় একটি ছোট্ট হলেও কিন্তু অন্য ধারানার স্টাইলে চায়ের দোকান দিতে পারেন তাহলে আপনার চায়ের দোকানে ভিড় জমবে অনেক। চায়ের স্টল দেওয়ার আগে পাইকারি কিছু চায়ের দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে নেবেন কোন চা পাতা কিনলে আপনি ব্যবসায় অল্প দামের চা কিনে বেশি টাকা লাভ করতে পারবেন। তবে চা এর গুণগত মানের দিকেও একটুখানি নজর দেবেন কারণ সবাই কিন্তু আপনার চায়ের টেস্ট ভালো পেলেই আপনার দোকানে এসে ভিড় জমাবে।
ক্রেতাদের মনের মতন চা বানাতে পারলেএবং তাদের মন জয় করতে পারলে আপনার ব্যবসার লাভ হতে শুরু করবে, প্রথমে যে চা বানাবেন বা যে পাতার চা বানাবেন সেই পাতার গন্ধ, লিকার এগুলো সম্পর্কে নিজে একটু চিন্তাভাবনা করবেন। যদি ভালো স্বাদের হয় তবে সেই চায়ের পাতা আপনার চায়ের স্টলে রাখুন। আপনার চায়ের দোকানে শুধুমাত্র এক ধরনের চা বানাবেন না। বিভিন্ন ক্রেতাদের বিভিন্ন রকমের স্বাদের ক্রাইটেরিয়া থাকে তাই তাদের স্বাদ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চায়ের ধরন আপনার চায়ের দোকানে রাখুন। তাদের পছন্দ অনুযায়ী যা আপনি অফার করতে পারেন।
প্রথমে আপনি চেষ্টা করবেন একটু কম দামে চা বিক্রি করতে। একবারে বেশি লাভ করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে দাম বাড়াবেন যখন মানুষের কাছে আপনার চা অনেক প্রিয় হবে। ক্রেতারা যখন আপনার উপর বিশ্বস্ত হবে, আপনার চায়ের স্বাদ, রং, লিকারের প্রতি বিশ্বাস আসবে তখনই আপনি চায়ের দাম একটু বাড়াতে পারেন।
চায়ের একটি বিশেষ পাঠ হলো দুধ। অনেকেই আছেন ঘন দুধ চা খেতে পছন্দ করে। এই দুধ চায়ের মধ্যে একটু এলাচ দিয়ে দিলে স্বাদ আরো অতুলনীয় হয়ে যায়। আপনি যেখান থেকে দুধ কিনবেন সেখানে দেখে নেবেন খাঁটি দুধ দিচ্ছে কিনা কারণ খাঁটি দুধের ওপরেই কিন্তু আপনার দুধ চার গুণাগুণ নির্ভর করবে।
চায়ের দোকানের জন্য বেস্ট স্থান কোনটা :-
চায়ের দোকান আপনি যে প্রান্তেই দিন না কেন ভালই চলবে, তবে একটু দেখা উচিত যানজটহীন এলাকায় অথচ বসবাসকারী মানুষজনের সংখ্যা হয়েছে কিন্তু কিছুটা জায়গা ফাঁকা নিস্তব্ধ এমন জায়গাতেই চা স্টল দেওয়াটা ভালো কারণ চা খেতে এসে সবাই নির্জনতা খোঁজে। কিছুক্ষণ বসে চিন্তা ভাবনায় ডুবে গিয়ে কিংবা গান শুনতে শুনতে, আড্ডা দিতে দিতে চা খেতে ভালোবাসে। তাই জন্য কোলাহলমুক্ত জায়গায় চায়ের দোকান দিলে বেশি ভালো চলবে।
চায়ের দোকানে শুধুমাত্র চা রাখলে চলবেনা, চায়ের সাথে টা টাও রাখতে হবে অর্থাৎ কিছু মুখরোচক খাবার বিস্কুট, চিপস এগুলো রাখলে চায়ের পাশাপাশি এই জিনিসগুলো বিক্রি হবে তাতে আপনারই লাভ হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য লজেন্স, চিপস এগুলো রাখলে বিক্রি ও বেশি হবে।
চায়ের দোকানে দু রকমের কাপ পাওয়া যায়। একটা হচ্ছে কাগজের কাপ অন্যটি হলো খুড়ির কাপ। অনেকেই রয়েছেন চায়ের স্টলে এসে মাটির কাপে অর্থাৎ খুড়ি করে চা খেতে ভালোবাসে। এর মধ্যে একটা আলাদা নস্টালজিয়া রয়েছে। মাটির খুঁড়ির গন্ধে চায়ের স্বাদ যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই আপনিও চেষ্টা করবেন আপনার চা স্টলে দু’রকমই কাপ রাখার। কাস্টমার যে কাপে চা খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন আপনি সেই কাপে করে চা দেবেন।
যে কোন ব্যবসা শুরু করলে মন দিয়ে শুরু করা উচিত। একদিন দোকান খুললেন আবার দুদিন বন্ধ দিলেন, তাহলে কিন্তু আপনার ব্যবসা ভালো চলবে না। সঠিক টাইমে দোকান খুলবেন এবং সঠিক টাইমে বন্ধ করবেন। আপনার চা স্টলে রোজকার উপস্থিতি আপনার ব্যবসার ভালো চলার জন্য নির্ভর করবে। ব্যবসা শুরু করতে হলে আর একটা জিনিস মাথায় রাখতে হয় সেটা হলো – মাথা গরম করবেন না, কাস্টমারদের সাথে ঠান্ডা মাথায় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবেন যাতে তারাও আপনার কাছে চা খেতে এসে একটা ভালো ব্যবহার পায়।
দাম কেমন রাখবেন?
আপনার চায়ের স্টলে যেমন অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত লোক আসবে আবার অনেক দরিদ্র লোক আসবে, তেমন উচ্চবিত্ত লোকেরাও আসবে। তাই কাপ বা খুড়ির মাপ অনুযায়ী আপনি তিন-চার ধরনের দাম রাখতে পারেন। ছোট কাপ হলে ৬ টাকা, মাঝারি কাপ হলে ৮ টাকা এবং বড় কাক হলে ১২ টাকা নিতে পারেন ।
দুধের ক্ষেত্রে দামটা একটু বাড়াবেন তবে এক্ষেত্রেও তিনটি ধাপেই দাম নির্ধারণ করবেন। এতে আপনার দোকানে সব রকমের কাস্টমার পাবেন।
চায়ের স্টলে একটি ডাস্টবিন রাখা অবশ্যই প্রয়োজন, যাতে ক্রেতারা চা খেয়ে চায়ের কাপটি যথাস্থানে ফেলতে পারে। আপনি যেখানে ব্যবসা করবেন শুধুমাত্র নিজের লাভ দেখলেই হবে না, আপনার ব্যবসার মাধ্যমে যাতে আশেপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সবশেষে একটাই কথা বলার, যে কোন ব্যবসা শুরু করার জন্য একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা দরকার। ব্যবসা শুরু করার মানসিকতা দরকার। তাই কোন কিছু শুরু করার আগে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করুন, মাঝপথে যাতে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে না হয়। একটি ব্যবসা থেকে প্রথমেই আপনি লাভবান হতে পারবেন না, ব্যবসা ধরে রাখতে পারলে একটা সময় ঠিক আপনি সফল হতে পারবেন।