কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক অভিনব প্রকল্পের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্প একটি অভিনব প্রকল্প। প্রান্তিক অঞ্চলে যে সমস্ত ব্যক্তি ছোট শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাদের জীবনের মান উন্নয়ন ঘটানো এবং আর্থিক সহায়তা করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য ২০২৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। তারপর থেকেই এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ছোট শিল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক কম সুদে ঋণ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া আরও একাধিক সুবিধা পেয়ে থাকেন বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তরা। আজকের এই প্রতিবেদনে এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, আবেদন পদ্ধতি এবং আরো অন্যান্য তথ্য নিয়ে আপনাদেরকে অবগত করব। আপনি যদি এমনই কোন ছোট শিল্পের সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে আপনার এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।
বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা :–
কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক চালু করা এই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা কারিগর শ্রেণির মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা, জমানত মুক্ত ঋণ, দক্ষতার প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম কেনার জন্য সাহায্য, ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ইনসেন্টিভ এবং মার্কেট লিঙ্কেজ সাপোর্টের সুবিধা দিয়ে থাকে। ব্যবসা সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৫ টাকার টুলকিট ইনসেন্টিভ পেয়ে যাবেন এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তরা।
এই প্রকল্পের আওতায় আবেদনকারী ব্যক্তিকে ব্যবসা শুরু করার জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ সুদের হারে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দেওয়া হয়। প্রথম ধাপে আবেদনকারীকে ১০০০০০ টাকা লোন দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০০০০০ টাকা লোন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ১৮ মাসে ঋণ পরিশোধ করার সুবিধাও পাওয়া যাবে।
কারিগরদের তাঁদের নিজের কাজের দক্ষতার নিরিখে স্বীকৃতি হিসাবে একটি পিএম বিশ্বকর্মা সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রত্যেক আবেদনকারী কারিগরদের বিশ্বকর্মা যোজনার আইডি কার্ড প্রদান করা হবে। প্রতিদিন কাজের শেষে ৫০০ টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হবে।
আরোও পড়ুন:- বাংলার বাড়ি প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার, ভূমিহীনদের জন্য বিশেষ পাট্টা?
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:-
১) ১৮ বছর বয়স হলেই এই স্কিমের জন্য আবেদন করা যাবে।
২) যে শিল্পকর্মের নিরিখে আবেদন করবেন, তাতে বিশেষ দক্ষতা থাকতে হবে।
৩) বর্তমানে মোট ১৮ ধরনের কারিগরদের এই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ছুতোর, নৌকা প্রস্তুতকারী, কামার, স্বর্ণকার, চর্মকার, কুমোর, মূর্তিশিল্পী, রাজমিস্ত্রি, নাপিত, ধোপা, মালাকার, দর্জি ও জেলে।
কিভাবে এই প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশন করবেন :-
১) সবার প্রথমেই পিএম বিশ্বকর্মা পোর্টালে যেতে হবে। ২) এরপর হোমপেজে গিয়ে ‘হাউ টু রেজিস্ট্রার’ (How to Register) অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩) মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন এবং আধার কেওয়াইসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন। রেজিস্ট্রেশন ফর্মে আপনার সমস্ত ডিটেইলস সঠিকভাবে লিখে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
প্রয়োজনীয় নথি :- মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, বাসস্থানের শংসাপত্র, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, পাসপোর্ট আকারের ছবি।
স্ট্যাটাস চেক করবেন কিভাবে :- প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন লগইন লিঙ্কে ক্লিক করার পর, আপনি আপনার মোবাইল নম্বর এবং ক্যাপচা কোড ইনপুট করুন। কিছুক্ষণ পরে আপনার নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বারে একটি OTP আসব। এই OTP জমা দেওয়ার সাথে সাথে, আপনি ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে অর্থপ্রদানের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য পাবেন।
পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা 2025 আবেদনের শেষ তারিখ কবে :-
ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা ২০২৫-এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট শেষ তারিখ উল্লেখ করেনি। আপনি ২০২৭-২০২৮ আর্থিক বছরের শেষ নাগাদ এই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা ২০২৫-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যদি আপনি কারিগরি শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে থাকেন, অথচ এখনো প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্পের নাম নথিভুক্ত করেননি, তাহলে খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পের নাম নথিভুক্ত করে এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করুন।

