পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষা যেন চিরবিদায় নিতেই চাইছে না এই বছর। দুর্গাপুজোর আগের থেকেই দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত এবং কিছুদিন নিম্নচাপ জনিত কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কলকাতা ও উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের জেলাগুলি জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল। যদি সেই পরিস্থিতি কোনরকমে মোকাবেলা করা গেলেও, দশমীর পরের টানা বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলা বিশেষ করে দার্জিলিং অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা নদীর জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে সেতু, নদীর গ্রাস করে নিয়েছে ঘরবাড়ি, মানুষজন, পশুপাখি। এখনো পর্যন্ত GTA সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২৪ জনের মতন মানুষ। এখনও পর্যন্ত দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ২৪ জন। এই পরিস্থিতিতে এইদিকে রোববার দিন কলকাতায় ছিল দূর্গাপূজার কার্নিভাল। এজন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্নিভালের যোগ দেওয়ায় রবিবার দিন পৌঁছাতে পারেননি দুর্যোগ পূর্ণ জায়গায়। তবে, সোমবারই উত্তরবঙ্গে বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানে গিয়ে তিনি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখেছেন, সেখানকার মানুষজনকে আশ্বাস বার্তা দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, যে সমস্ত ব্যক্তি এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবার কিছু ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবারের যেকোনো একজন ব্যক্তিকে হোম গার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া, থাকা বিছানা পত্রের ব্যবস্থা করার বন্দোবস্তের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের দিকে সবসময় নজর রাখার চেষ্টা করছেন। আটকে পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। দুর্গাপূজার শেষে অনেক পর্যটক কলকাতা ও অন্যান্য বাইরে থেকে উত্তরবঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ করে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ায় তারা হোটেলগুলোতে আটকে পড়েছেন। রাস্তায় ধস নেমে যাওয়ার জন্য বাড়ি ফিরতে পারছেন না। সেই সমস্ত হোটেলে আটকে পড়ার পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আটকে থাকা পর্যটকদের ফেরাতে ৪৫টি ভলভো বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভুটান, অসম থেকে জল ঢুকে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। ভুটানের ছাড়া জলে ভেসে গিয়েছে নাগরাকাটা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উত্তরবঙ্গের মানুষদের জন্য পোস্ট লেখেন। সেখানে উল্লেখ করা ছিল ” আমার আন্তরিক আবেদন, এই দুর্যোগে বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। তবে কষ্টে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তবুও এই কঠিন সময়ে মনে ধৈর্য রাখা সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার কাছে অনুরোধ তাই সংযম ও সতর্কতা বজায় রাখতে। সরকার ও প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে মানুষের পাশে আছে। সবাই একসাথে থেকে এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবো। দয়া করে শান্ত থাকুন, গুজবে কান দেবেন না। একে অপরের পাশে থেকে সংকট পূর্ণ অবস্থা থেকে দ্রুত কাটিয়ে উঠবো।
এদিকে, মিরিকে কমিউনিটি অডিটোরিয়ামে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির, সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। ১৮ জনের এক পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আত্মীয়দের অভিযোগ, রাস্তা খারাপ থাকায় BDO-কে বারবার বোল্ডার ফেলতে বলা হয়েছিল। অনুরোধে কর্ণপাতই করেনি কেউ, অভিযোগ পরিবারের। ব্যবস্থা নিলে ভয়াবহ বিপর্যয় এড়ানো যেত, দাবি দুর্গতদের।
অন্যদিকে, ধস বিধ্বস্ত নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়ে মারধরের মুখে পড়েন বিজেপির সাংসদ ও বিধায়ক। শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘উত্তরবঙ্গে বন্যা-ধস-মৃত্যুমিছিল, কার্নিভালে নাচছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় দুর্গতদের ত্রাণ দিতে গিয়ে বিজেপির বিধায়ক সাংসদরা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে আসেন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী রবিবার দিন কার্নিভাল অনুষ্ঠানের যোগ দিলেও সোমবার দিনই উত্তরবঙ্গের দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করতে এবং দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করতে চলে গিয়েছিলেন। আপাতত সেখানকার এই অবস্থায় মৃত্যু হওয়া পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।