আমার সবাই জানি, সোনার দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ সোনা’ই। সোনা বিনিয়োগ করলে অনেক মুনাফা রয়েছে, তাই বিনিয়োগকারীদের শেষ পছন্দ ছিল সোনা। তবে, হঠাৎ করেই সোনা ও রুপাকে পিছনে ফেলে দৌড়ে প্রথম হয়ে গেলো অন্য এক ধাতু। যার দাম বেড়ে গেলো আগের তুলনায় ৮০ শতাংশ। জানেন কোন ধাতুর কথা বলা হচ্ছে? বিনিয়োগকারীদের সেরা পছন্দের লিস্ট থেকে হঠাৎ সেই ধাতু কেনো বেশি পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিলো?
২০২৫ সালের শুরু থেকেই এই মূল্যবান ধাতুর দাম বেড়েছে এক লাফে প্রায় ৮০ শতাংশ। যেখানে ২০২৫ সালের শুরুতে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ এবং রুপোর ৬৮ শতাংশ, সেখানে ‘বড়দা’ অর্থাৎ প্লাটিনাম এর দাম সবক’টিকে ছড়িয়ে ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছে। সোনা ও রুপাকে ম্লান করে দিয়ে নিজের ঔজ্জ্বল্যতাকে নিয়ে সেরা জায়গা করে নিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের অনিশ্চিত আর্থিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার হ্রাসের প্রভাবে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনা-রুপোকে বাদ দিয়ে প্লাটিনামের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আরোও পড়ুন:- ৫ কেন্দ্রীয় পুলিশ সংস্থায় ৩,০৭৩ শূন্যপদে সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ, জানুন আবেদন পদ্ধতি সহ অন্যান্য তথ্য
প্ল্যাটিনামের দাম কেন বাড়ছে?
প্লাটিনামের দারুন দারুন ডিজাইন করা গয়না পছন্দ করছেন আমজনতা। একঘেয়ে সোনা ও রুপার অলংকার থেকে এই ধাতু এতটাই ফ্যাশনেবল ও উজ্জ্বল তাই এই ধাতুর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্ল্যাটিনামের দাম বাড়ার কারণ, এই ধাতুর সরবরাহে ঘাটতি এবং শিল্প ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এর ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি। গত দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৩-এ দামকমেছিল ৮%, আর ২০২২ সালে বেড়েছিল মাত্র ১০%। কিন্তু ২০২৫-এ পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গিয়েছে। একলাফে ৮০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
প্ল্যাটিনাম এখন তার পুরনো গৌরবকে যেন ফিরে পেতে চাইছে। কারণ একসময় সোনার চেয়েও দামি ধাতু ছিল এই প্লাটিনাম। কিন্তু ধীরে ধীরে সোনার দাম তিন গুণ বেড়ে যায়। কিন্ত আবার আগের মতন মানুষের চাহিদা সোনার তুলনায় প্ল্যাটিনামে গিয়ে পড়েছে। কারণ দেখতে সুন্দর, টেকসই এবং ফ্যাশনেবল।
প্লাটিনামের ব্যবহার:-
প্ল্যাটিনামের সবচেয়ে বড় উৎপাদক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেখানে টানা বৃষ্টি, বিদ্যুৎ সঙ্কট ও জলাভাবের কারণে আগের তুলনায় উৎপাদন ২৪ শতাংশ কমে গিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড প্ল্যাটিনাম ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮.৫ লক্ষ আউন্স প্ল্যাটিনামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু মানুষের চাহিদা থাকায় প্লাটিনাম ঘাটতি দেখা দেবে।
প্লাটিনামের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় শিল্পক্ষেত্রে। এখানে প্ল্যাটিনামের ৭০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে, ক্যাটালিটিক কনভার্টারে যা গাড়ির দূষণ কমাতে সাহায্য করে এবং গ্রিন টেকনোলজিতে এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। চীন এই বছর প্ল্যাটিনাম ক্রয় ২৬ শতাংশ বাড়িয়েছে। এছাড়া অটোমোবাইল শিল্পেও প্ল্যাটিনামের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। হাইড্রোজেন এনার্জির জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতেও এই ধাতু ব্যবহার করা হয়।
শুধুমাত্র শিল্পক্ষেত্রে নয়, বিনিয়োগকারীদের নতুন পছন্দ হতে চলেছে এই ধাতু। গত এক বছরে আগের তুলনায় বিনিয়োগ বেড়েছে ৩০০ শতাংশ। আর কিছুদিনের মধ্যে চ মজুত কমায় বাজারে ঘাটতি দেখা দেবে এই ধাতুর। চীনে এই ধাতুর গয়না তৈরির জন্য প্ল্যাটিনামের ব্যবহার বেড়ে গেলে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে এর দাম আরও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতেপ্রতিবছরই প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৮.৫ লক্ষ আউন্স ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে চাহিদা বেশি থাকায় ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতেও এই ধাতুর দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। সোনা ও রুপাকে পিছনে ফেলে প্রথম সারিতে থাকবে প্লাটিনাম।