মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে রাজ্যের লাখ লাখ পড়ুয়া। মেধাবী ও পিছিয়ে পড়া স্টুডেন্টদের পড়াশুনার দিশা দেখাচ্ছে রাজ্য সরকারের একাধিক স্কলারশীপ। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই একাধিক নতুন স্কলারশীপ শুরু করছেন এবং পুরোনো স্কলারশিপের বৃত্তি বৃদ্ধি করেছে। স্কুল স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই হাজার হাজার টাকার বৃত্তি পান রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা। মহানগর কলকাতা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের পিছিয়ে পড়া বাড়ির পড়ুয়ারাও তাকিয়ে থাকে স্কলারশীপের দিকে। একের পর এক স্কলারশীপ গুলির আবেদনের সময় শুরু হতে চলেছে। এখন রাজ্য সরকারের সেরা দুটি স্কলারশীপ নিয়ে আলোচনা করা হবে-
১) স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট- কাম – মিনস স্কলারশীপ:- পূর্ববর্তী বাম সরকারের আমলে এই স্কলারশীপ প্রদান শুরু হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই স্কলারশিপের বৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করেন এবং একাধিক নিয়ম পরিবর্তন করেন। এই স্কলারশীপ বিকাশ ভবন স্কলারশীপ নামেও পরিচিত। রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীনে এই স্কলারশীপ দেওয়া হয়। রাজ্যের মেধাবী ও আর্থিক ভাবে দুর্বল ছাত্রছাত্রীরা এই স্কলারশীপ পান। উচ্চমাধ্যমিক, ডিপ্লোমা, স্নাতক ও মাস্টার ডিগ্রির কোর্সে এই স্কলারশীপ পাওয়া যায়।
এই স্কলারশীপের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হল: – এই রাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক, ডিপ্লোমা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের ছাত্র- ছাত্রী হতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষায় ৬০% মার্কস থাকতে হবে(পূর্বে ৭৫% ছিল)। পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লাখের নিচে হতে হবে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি গুলি হল :- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মার্কশিট, পারিবারিক আয়ের সার্টিফিকেট, স্কুল – কলেজে কোর্সের প্রমাণপত্র, ব্যাংক একাউন্ট ও ফোন নং।
এই স্কলারশিপের বেনিফিট গুলি হল :- এই স্কলারশিপের দ্বারা একজন মেধাবী স্টুডেন্ট বছরে নূন্যতম ৬০০০ টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পায়। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতোত্তর কোর্সের জন্য বৃত্তির পরিমাণ ভিন্ন। এমনকি আর্টস ও সায়েন্সের জন্যও বৃত্তির পরিমাণ ভিন্ন।
এছাড়াও কোন কোর্সের প্রথম বছরে একবার আবেদন করলে প্রতিবছর সহজেই রিনিউয়াল করা যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাংক একাউন্টে ডাইরেক্ট বৃত্তি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরো ও পড়ুন:- ভারতীয় রেলে বিপুল শূন্যপদের ঘোষণা। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর।
এই প্রকল্পের পিছনে সরকারের আসল লক্ষ্য হল উচ্চশিক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা। টাকার অভাবে পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার ঘটনাকে নির্মূল করা। উচ্চশিক্ষায় রাজ্যের মানের উন্নতি ঘটানো।
আবেদনের পদ্ধতি গুলি হল :- আগে এই স্কলারশিপের ফর্ম অফলাইনে পূরণ করে বিকাশ ভবনের ড্রপ বক্সে জমা করতে হতো। কিন্তু এখন পুরোপুরি অনলাইন মুডে এই ফরম পূরণ করা যায়। এই স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে ফরম ফিলাপ করতে হবে। প্রতিবছর আগষ্ট- সেপ্টেম্বর মাসে এই স্কলারশিপের আবেদন শুরু হয়। এই আবেদন চলতে থাকে নভেম্বর – ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত।
এই স্কলারশিপের আবেদন করা এবং এই স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও জানতে নিচের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন- www.svmcm/wbhed.gov.in
২) ঐক্যশ্রী সংখ্যালঘু স্কলারশীপ :-
রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়ের জন্য একটি গুরুত্বপুর্ন স্কলারশীপ হল এই ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের জনমুখী প্রকল্প গুলির অন্যতম হল এই স্কলারশীপ। প্রতিবছর এই প্রকল্পের অধীনে লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হয়। রাজ্যের মেধাবী ও পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা স্কুল স্তর থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত এই স্কলারশিপের বৃত্তি পান।
এই স্কলারশিপ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা গুলি হল :- পড়ুয়াকে অবশ্যই বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (মুসলিম, শিখ, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ ও জৈন)সদস্য হতে হবে।
পারিবারিক বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার নিচে হতে হবে। স্কুল কিংবা কলেজের রেজিস্টার্ড স্টুডেন্ট হতে হবে।
এই স্কলারশিপের দ্বারা একজন আবেদনকারী নূন্যতম ৪ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পান। বিভিন্ন যোগ্যতায় বিভিন্ন কোর্সের জন্য বৃত্তির টাকার পরিমাণ আলাদা।
এই স্কলারশিপে আবেদনের করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি গুলি হল :- লাস্ট পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট, স্কুল বা কলেজ কোর্সের প্রমাণপত্র, পারিবারিক ইনকাম সার্টিফিকেট, সংখ্যালঘু প্রমাণপত্র ও ব্যাংকের একাউন্ট ।
এই স্কলারশিপের পিছনে সরকারের উদ্দেশ্য হল সংখ্যালঘু শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিটি সংখ্যালঘু শ্রেণীর পড়ুয়াদের উচ্চ শিক্ষায় আর্থিক সাহায্য সুনিশ্চিত করা। মেধাবী ও পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক উন্নতি ঘটানো।
এই স্কলারশিপের আবেদন করার পদ্ধতি হল :- সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে এই স্কলারশিপের আবেদন করা হয়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর – অক্টোবর মাসে এই স্কলারশিপের আবেদন শুরু হয়। এই স্কলারশিপের আবেদন ২ মাস ধরে চলতে থাকে। এই স্কলারশিপের আবেদন করা এবং আরও তথ্য জানতে নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট এড্রেস নজর রাখুন- https://wbmdfcscholsrship.in