বার্থ সার্টিফিকেট একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় নথি। স্কুল এডমিশনের ক্ষেত্রে থেকে পাসপোর্ট তৈরি, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে, ভোটার নিবন্ধন, আধার তালিকাভুক্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহ বন্ধন সব ক্ষেত্রে সর্বোপরি নাগরিকত্ব গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বার্থ সার্টিফিকেটে একজন ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ, জন্ম স্থান, লিঙ্গ ইত্যাদি রেকর্ড করা থাকে। ভারতে ১৯৬৯ সালে জন্ম নিবন্ধন আইন চালু করা হয়। এই জন্ম নিবন্ধন আইন চালু করার প্রধান কারণ হলো যাতে প্রতিটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই তাদের একটি আইনি পরিচয় তৈরি হয় অর্থাৎ আইডেন্টিটি তৈরি করা হয়। একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই তার নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে এই জন্ম সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আইনের মাধ্যমে একজন শিশুর জন্ম ও অন্যান্য তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নথিভুক্ত করা হয়, যেটি একটি শিশুকে রাষ্ট্রের পূর্ণ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৬৯ সালে এই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন কার্যকর করা হয়ে থাকে। এরপর থেকেই এটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া হয়ে আসছে।
অনেক বছর আগে বার্থ সার্টিফিকেট আইন যখন শুরু হয়নি, অর্থাৎ বাড়িতেই শিশু জন্ম হতো সেই সময় কোন বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করার সময় সঠিক বয়স দিতে পারতেন না তাদের অভিভাবকরা। এর ফলে মনগড়া একটা বয়স দিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। কিন্তু জন্ম সার্টিফিকেট তৈরি করার আইন আসার পরেই প্রতিটি শিশুকেই হাসপাতাল থেকেই জন্ম সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়, যেটা তাদের বয়সের প্রমাণ রাখতে সাহায্য করে।
এতদিন পর্যন্ত বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করার জন্য কিংবা আবেদন করার জন্য পঞ্চায়েত অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটি মানুষই কর্মব্যস্ত থাকে। অফিস ছুটি নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করা অনেক ঝক্কির কাজ। অনেক সময় একদিনেও কাজ সম্পন্ন হয় না বলে ২ থেকে ৩ দিন দৌড়াতে হয় পঞ্চায়েত অফিসে। এখন থেকে এই কাজ খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। আপনি বাড়িতে বসে আপনার মোবাইল ফোনটি দিয়েই বার্থ সার্টিফিকেট তৈরির জন্য আবেদন করতে পারেন। বর্তমানে প্রত্যেকটি সরকারি কর্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম কাজ অনলাইন মাধ্যমে করে নেওয়া হচ্ছে। অনুরূপ বার্থ সার্টিফিকেট তৈরির কাজটিও আপনি অনলাইন মাধ্যমে করে ফেলতে পারবেন।
কিভাবে ঘরে বসে অনলাইনে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করবেন?
যদি আপনার শিশু সরকারি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে তাহলে, সেখান থেকে বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়। এর জন্য আলাদা করে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। কিন্তু আপনার শিশু যদি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে থাকে তাহলে এই বার্থ সার্টিফিকেট পরিষেবা পাওয়া সেখান থেকে যায় না। সেই ক্ষেত্রে জন্মের ২১ দিনের মধ্যে বাচ্চাটির বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হয়। যদিও আপনি ২১ দিনের পরেও বার্থ সার্টিফিকে তৈরি করতে পারবেন তবে তার জন্য আলাদা কিছু নথি এবং শর্ত পূরণ করতে হবে।
আরোও পড়ুন: ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোয় ৩৯৪ অফিসার নিয়োগ, জেনে নিন আবেদনের শেষ তারিখ ও অন্যান্য তথ্য।
Birth Certificate-এর জন্য প্রয়োজনীয় নথি :-
বার্থ সার্টিফিকেট তৈরীর জন্য শিশুর জন্মের হাসপাতালের রেকর্ড, মা ও বাবার আধার কার্ড, রেশন কার্ড অথবা বসবাসের প্রমাণ, টিকাকরণের কার্ড বা আঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের সার্টিফিকেট প্রয়োজন পড়বে।
আবেদন করার পদ্ধতি :- আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে বার্থ সার্টিফিকেটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। https://janma-mrityutathya.wb.gov.in/ ওয়েবসাইটে গেলেই বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবেন। এইখানে গিয়ে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপনার একটি বৈধ ইমেইল আইডি এবং মোবাইল নাম্বার থাকতে হবে। Apply for New Registration’ অপশনে ক্লিক করলে আপনি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন করার পরে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবেন। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে লগইন করলেই এরপর আবেদনপত্র পূরণের একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। সেটা সঠিকভাবে পূরণ করে আপনার প্রয়োজনেও ডকুমেন্টগুলো আপলোড করে সাবমিট করতে হবে। ফর্মে নবজাতকের জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, নাম ও পদবী দিতে হবে। শিশুটির জন্ম স্থান, রাজ্য ও জেলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। নির্দিষ্ট হাসপাতাল হলে, জেলা, ব্লক বা পুরসভা, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের অপশন বেছে নিতে হবে। ওয়েবসাইটেই একটা তালিকা দেওয়া রয়েছে। সেখান থেকে হাসপাতালের নাম বেছে নিতে হবে।এরপর একটি প্রিন্ট কপি আসবে সেটি নিজের কাজে রেখে দেবেন প্রয়োজনে কাজে লাগবে।। অফলাইনে ফর্ম ও নথির প্রিন্ট কপি সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা রেজিস্ট্রারের ঠিকানায় জমা দিতে হবে এবং রসিদ সংগ্রহ করতে হবে। রেজিস্ট্রার কর্তৃক যাচাইয়ের পর ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে Birth Certificate প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং তা অনলাইনেও ডাউনলোডযোগ্য হবে। এছাড়া অনলাইন মাধ্যমেও আপনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে। সেটি রেখে দিতে হবে। রেজিষ্টেশন নম্বর দিয়ে পরবর্তীকালে স্ট্যাটাস চেক এবং সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে। সার্টিফিকেট তৈরি হলে মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠানো হবে।
বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্ম শংসাপত্র তৈরি না করলে ভবিষ্যতে আপনার শিশুর জন্য অনেক রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সর্বপ্রথম স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়া, পাসপোর্ট তৈরি, সরকারি চাকরির রেজিস্ট্রি, বিভিন্ন সরকারি কাজ আটকে যেতে পারে সার্টিফিকেট না থাকার জন্য। এছাড়াও পহেলা অক্টোবর ২০২৩ এর পর থেকে জন্ম সংসদ পত্রকে পরিচয় পত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে পরিগণিত করা হয়েছে, এর জন্যই আপনার শিশু জন্মের ২১ দিনের মধ্যেই আপনি অবশ্যই জন্ম সার্টিফিকেট তৈরি করে নেবেন।