বর্তমানে চাকরি সংস্থান হওয়া যেন আকাশে চাঁদ পাওয়ার মতন অবস্থা হয়েছে। অনেক ব্যক্তি চাকরির আশা ত্যাগ করে ব্যবসা করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ বর্তমানে বেকার সমস্যা একটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু চাকরির পরিবর্তে ব্যবসা করতে হলে কি ধরনের ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যাবে এই চিন্তা অনেকের মাথাতেই থাকে। এমন কিছু ব্যবসা যেখানে ব্যবসা শুরুর দিকে মূলধন তেমন একটা খরচ করতে হয় না, অথচ ব্যবসা থেকে মাসিক আয় লাভজনক থাকে। আপনি যদি একজন শিক্ষিত বেকার হয়ে থাকেন তাহলে চাকরির বিকল্প হিসাবে এমন একটি ব্যবসা নির্বাচন করুন যেটি আপনাকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে। আজকের এই প্রতিবেদনে এমন একটি ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করব এবং আপনাদেরকে এই ব্যবসার ধরন সম্পর্কে আইডিয়া দেব যার মাধ্যমে আপনিও এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন সাথে লাভজনক উপার্জন করতে পারবেন প্রত্যেক মাসে।
বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আপনি ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন যদি আপনার অন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে এবং ইংরেজি পড়তেও লিখতে আপনি অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন। এই ব্যবসায় শূন্য ইনভেস্টমেন্টে আপনি ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন তাও ভারতের প্রথম সারির ব্যাংকগুলোর সাথে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে আপনি ব্যাংকের সাথে ব্যবসায় যুক্ত হবেন? কি করে যাত্রা শুরু করবেন এবং এই ব্যবসা দিয়ে কিভাবে লাভ করবেন? এই সকল তথ্য বিস্তারিতভাবে নিজে আলোচনা করা হলো। আপনি যদি একজন শিক্ষিত বেকার হয়ে থাকেন তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আপনার বেকারত্ব জীবনের বেকার শব্দটি চিরদিনের মত মুছে যেতে পারে এমন একটি ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে।
Bank CSP ব্যবসা:- ব্যাংক সিএসপি অর্থাৎ ব্যাংক কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট কোন একটি ক্ষুদ্র ব্যাংকিং আউটলেট যেটি, একজন ব্যক্তি নিজের স্বাধীনতায় পরিচালনা করতে পারবেন। এটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমোদিত একটি শাখা হিসেবে কাজ করে থাকে। গ্রামে বা শহরতলীর মানুষরা ব্যাংকিং সেবা পেতে গেলে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হয়, তাদের পক্ষে বাড়ির নিকটবর্তী স্থানে সন্তুষ্ট ব্যাংকের অনুমোদিত একটি ব্রাঞ্চ হিসাবে এই ব্যাংক সিএসপি সেন্টার কাজ করে। এই ব্যাংক সিএসপি সেন্টারের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিক ব্যাংকিং পরিষেবা পেয়ে থাকেন। এমন অনেক এখনো অনুন্নত অঞ্চল রয়েছে যেখানে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক শাখা তৈরি হয়নি সে সমস্ত জায়গায় মিনি শাখা হিসাবে এই ব্যাংক সিএসপি সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
আরোও পড়ুন:- RBI new rule for home loan: মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর, কমতে চলেছে গৃহঋণের বোঝা
গ্রামে CSP এর চাহিদা বাড়ার কারণ :-
বিশেষ করে গ্রামের দিকে সিএসপি সেন্টারে চাহিদা ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ বর্তমানে কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে যাতে সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যায় তার জন্য ব্যাপকভাবে জোর দিচ্ছেন। বিশেষ করে এখন সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সাধারণ নাগরিক আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর ফলে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে। এইজন্য প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে। যেখানে এসে সাধারণ নাগরিকরা জনধন একাউন্ট, ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার, ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধা, পেনশন এবং গ্যাস ভর্তুকি এই সমস্ত পরিষেবা গুলি পেতে সুবিধা হয়েছে এবং কোন কারনে সমস্যা হলে ব্যাংকিং শাখা এসে জানানো সুবিধা হয়েছে।
ব্যাংকিং সিএসপি ব্যবসা শুরু করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা এবং কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। নিম্নে এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং এই ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু নিয়মকানুন আলোচনা করা হলো।
বয়স:– এই ব্যবসা শুরু করার জন্য ব্যক্তির বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:– ব্যক্তির ন্যূনতম শিকাগোতা যোগ্যতা থাকতে হবে মাধ্যমিক।
কম্পিউটার জ্ঞান:- আবেদনকারী ব্যক্তির বেসিক কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষতা থাকতে হবে।
স্থান:- এই ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দোকানঘর প্রয়োজন হবে। রাস্তার পাশেই দোকান ঘরটি হলে ভালো হয়। প্রয়োজনে আপনি ভাড়াও নিতে পারেন।
নথিপত্র সমূহ:- এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আবেদনকারীকে যে সমস্ত নথি প্রদান করতে হবে সেগুলি হল :-
১) ভোটার/আধার কার্ড
২) পাসপোর্ট সাইজ ছবি
৩) প্যান কার্ড
৪) পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট
৫) ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা কেওয়াইসি
৬) ইন্টারনেট সংযোগ: দোকান ঘরের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা থাকা বাধ্যতামূলক।
CSP কেন্দ্রের মাধ্যমে আপনি কোন কোন ব্যাংকিং পরিষেবা পাবেন:-
গ্রাহকরা ব্যাংকিং সিএসপি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ব্যাংকিং পরিষেবা পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে – এর মাধ্যমে কি কি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়া যায়?
Bank CSP এর মাধ্যমে গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পান, যেমন: নতুন সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ, নগদ টাকা জমা দেওয়া বা তোলা, ব্যালেন্স চেক ও মিনি স্টেটমেন্ট প্রিন্ট করা, পেনশনের টাকা উত্তোলন, গ্যাস ভর্তুকি এবং ক্ষুদ্র ঋণ ও বীমা পরিষেবা। অর্থাৎ এক ছাদের তলায় ব্যাংক সিএসপি কেন্দ্রের মাধ্যমে আপনি ব্যাংকিং যে কোন পরিষেবা পেয়ে যাবেন খুব সহজে।
বর্তমানে কোন ব্যাংকগুলো সিএসপি পরিষেবা দিচ্ছে:-
বর্তমানে প্রায় ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় প্রত্যেকটি ব্যাংক CSP পরিষেবা প্রদান করছে।
১) State Bank of India (SBI) ২) Punjab National Bank (PNB) ৩) Bank of Baroda (BoB) ৪) Canara Bank ৫) Indian Bank ৬) Bank of India (BOI) ৭) UCO Bank ৮) Union Bank of India ৯) HDFC ১০) ICICI ১১) Axis Bank
Bank CSP ব্যবসা থেকে কীভাবে আয় করবেন:-
CSP ব্যবসা থেকে মূলত কমিশনের ভিত্তিতে টাকা উপার্জন করা যায়। ব্যাংকিং বিভিন্ন পরিষেবার উপর ভিন্নমাত্রার কমিশন প্রদত্ত থাকে। CSP এজেন্টরা এই কমিশন থেকেই মূলত প্রত্যেক মাসে আয় করে থাকে।
যেমন:-
১) টাকা জমা বা উত্তোলনের জন্য প্রতি ট্রান্সঅ্যাকশনে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাওয়া যায়।
২) নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার উপর ফিক্সড কমিশন দেওয়া হয়।
৩) বিমা বিক্রির উপর কমিশন
৪) লোন প্রসেসিং ফি ওপর কমিশন
৫) AEPS লেনদেন ওপর কমিশন।
এছাড়াও সিএসপি এজেন্টরা আরো অতিরিক্ত কিছু পরিষেবা দিয়ে থাকেন গ্রাহকদের। সেখান থেকে অতিরিক্ত কিছু ইনকাম করেন তারা। যেমন – মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধ, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড তৈরির আবেদন গ্রহণ ইত্যাদি।
এই ব্যবসার সুবিধা কি কি রয়েছে:-
সিএসপি ব্যবসা নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। আপনি আপনার ব্যবসার নিজের মালিক। এছাড়া এটি যেহেতু সরকার অনুমোদিত একটি শাখা তাই কাজের নিরাপত্তা রয়েছে। কাজে নিরাপত্তা রয়েছে বলে, প্রত্যেক মাসে উপার্জনের একটা নিরাপত্তা থাকবে। সিএসপি শাখার মাধ্যমে বহু মানুষজনের কাছে আপনার একটা পরিচিতি লাভ হবে। প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার মাধ্যমে গ্রাহকদের পরিষেবা দিয়ে সাহায্য করার সুযোগ পাওয়া যাবে। সরাসরি ব্যাংকের সঙ্গে সংযোগ পাবেন।
সিএসপি ব্যবসা থেকে প্রত্যেক মাসে কত আয় হতে পারে:-
প্রত্যেক মাসেই আপনি ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করার সুযোগ পাবেন। উৎসবের মুখে কিংবা সরকারি প্রকল্পের কাজের সময় এই আয় বর্ধিত হতে পারে।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য কি হবে আবেদন করবেন:-
এই ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছে থাকলে আপনাকে বিভিন্ন ব্যাংকে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যাংক সিএসপি আবেদনপত্রে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পরে আপনার দেওয়ার ডকুমেন্টগুলোর ভেরিফিকেশন করা হবে, এছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং প্রশিক্ষণের পর আপনাকে সিএসপি কেন্দ্র খোলার জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে একটি অঞ্চলে একটিমাত্র সিএসপি কেন্দ্র খোলার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। আপনি যে অঞ্চলের বাসিন্দা সেখানে যদি আগে থেকে কোন সিএসপি কেন্দ্র খোলা থাকে তাহলে আপনি পুনরায় আর কোন সেন্টার খুলতে পারবেন না।
আপনি যদি একজন শিক্ষিত হয়েও বেকার থাকেন, অথচ ব্যবসা শুরু করার মূলধন আপনার কাছে নেই। তাহলে আর কোন চিন্তা না করে ব্যাংকিং CSP সেন্টার খোলা আপনার একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিগণিত হবে। এই ব্যবসায় যেহেতু শূন্য ইনভেস্ট করতে হয়, তাই আপনার মূলধন নিয়ে কোন চিন্তা থাকবে না। প্রত্যেক মাসে নিশ্চিত অর্থ উপার্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রাহকদের ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে নিজের পরিচিতি বিস্তার ঘটানো এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষদের ব্যাংকিং পরিষেবা দিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে নিরাপদ নিশ্চিত অর্থ উপার্জন করে আপনিও স্বনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবেন।