এনআরসি (NRC) যার সম্পূর্ণ অর্থ হলো ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি। এই নথি আপনাকে নাগরিকত্ব প্রমাণে সাহায্য করে। ১৯৮৭ সালের পরে যে সমস্ত ব্যক্তির জন্ম হয়েছে তাদের প্রত্যেককে এনআরসি সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে এনআরসি নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এরইমধ্যে পঞ্চায়েত অফিস গুলিতে বার্থ সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য নাগরিকদের লাইন উপচে পড়ছে ভিড়। দেশের মধ্যে থাকা অবৈধ নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ করার জন্য মূলত এনআরসি সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সমস্ত ব্যক্তির জন্ম ১৯৮৭ সালের পরে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরেছে। যদিও এই মুহূর্তে আসামে এটি কার্যকর করা হয়েছে, তবে যেহেতু সামনে বিধানসভার ভোট রয়েছে তাই পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের মধ্যেও আতঙ্কে সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালের নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ২০২৩ সালে পুনরায় নতুন নাগরিকত্ব আইন করা হয়, এরপরই ভারত জুড়ে এনআরসি বাধ্যতামূলক করার একটি প্রস্তাব ছিল। আসাম রাজ্যে ২০১৬ সালের পর এনআরসি আপডেট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, আসাম রাজ্যের ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি আবেদনপত্র ইতিমধ্যে যাচাই করণ করা হয়ে গেছে।
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকা গুলিতে এনআরসি সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত অফিসগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে মানুষজন। রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসআইআর নিয়ে মানুষের মনে একটা ভয় দেখা দিয়েছে।
SIR সম্পূর্ণ অর্থ হলো SPECIAL INTENSIVE REVISION, যার বাংলা অর্থ হল ভোটার তালিকার বিশেষ পর্যালোচনা করা। ভারতে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোট আসার আগে যে কোন রকমের ভোটার তালিকা অসংগতি এবং ভোটারের তালিকা খুঁজে বার করা কিংবা কোন জনগণের সঠিক তথ্য সম্পর্কে যাচাই করণ করার জন্য এস আই আর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আরোও পড়ুন: শিশুদের আধার কার্ড আপডেট করুন এই পদ্ধতিতে, আপডেট না করলে ব্লক হয়ে যেতে পারে আধার কার্ড
ইতিমধ্যে অনেক রাজ্যে এই প্রক্রিয়া চালু হয়ে গিয়েছে। এই জন্যই যেহেতু সামনে নির্বাচন রয়েছে, তাই পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা গুলিতে মানুষের মনে আতঙ্কে সৃষ্টি হয়েছে এসআইয়ের নিয়ে। রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষজন পৌরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আদালতে, জন্ম সনদ সংশোধন করতে স্ট্যাম্প পেপার নিয়ে লাইন দিয়েছে।
ইতিমধ্যে অনেক খবর উঠে আসছে যে বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশী নাগরিক সন্দেহে অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হচ্ছে। এমন অনেক জায়গায় হয়েছে যে ভুল সন্দেহে মানুষকে হেনস্থা করা হয়েছে। এই সমস্ত খবরের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের মনে ভয়ের দানা আরো বড় আকার ধারণ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু সামনে নির্বাচন রয়েছে, এর জন্যই নির্বাচন কমিশন রাজ্য ভোটার তালিকা সম্পাদনের জন্য বল রোলিং শুরু করেছে। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার আতঙ্কে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কিছু জেলা যেমন মুর্শিদাবাদ মালদা এখানকার সাধারণ নাগরিকরা, ইতিমধ্যে পৌরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েতে, আদালতে স্ট্যাম্প পেপার নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন জন্ম সনদ সংশোধন করার জন্য।
বিশেষ করে ২০১৯ সালে যখন আসাম রাজ্য এনআরসি তালিকা প্রকাশ করেন, তখন দেখা যায় যে সমস্ত ব্যক্তির নাম এনআরসি তালিকায় ছিল না তাদের বেশিরভাগই হিন্দু। তবে পরবর্তীতে বিজিপি সরকার এটা মনে করেন যে এদেরকে রাজ্য থেকে বিতারিত করলে ভোট ব্যাংকে প্রভাব পড়তে পারে। যদিও আসাম রাজ্যের এই এনআরসির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাতে। ২০২৬ সালে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন আর এর জন্যই ভোটার তালিকায় নতুন করে সংশোধন করার জন্য এনআরসি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে বিজিপি ও তাদের সমর্থক দলগুলির মধ্যে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এর বিপক্ষে রয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইচ্ছে করে বিরোধীদল মানুষের মধ্যে এনআরসি আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায় এই বিরোধী দলের উদ্দেশ্যই হল বাঙালিকে সংকটে ফেলে সমর্থন আদায় করা।
বিহার ও অসমের জন্ম নিবন্ধন পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যার জন্যই এনআরসি অভিযান চালানো হচ্ছে আর সেই সূত্র ধরেই বাংলাতেও তার প্রভাব পড়বে এবং সামনেই এনআরসি অভিযান চালানো হবে এমনই আতঙ্কে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা গুলিতে ইতিমধ্যে অরাজকতা ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।