আমাদের দেশের এখনও অনেক কৃষক ভাইয়েরা আছেন, যারা স্বল্প অশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত। এই কারণেই সঠিক উপায়ে কৃষিকাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন তারা। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃষিকাজ করতে গিয়েও তাদের সমস্যা হয়। এমনকি এই কারণেই অনেক সময় তারা অসাধু ব্যক্তির দ্বারা প্রতারিত হন। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃষিকাজ না করার কারণে কৃষিকাজে খরচ বেশি হয়, ফসল নষ্ট এবং কৃষকরা সঠিক দামে ফসল বিক্রি করতে পারেনা। এই কারণেই কৃষকদের আয় বাড়েনা। প্রতিবছর কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলের নির্দিষ্ট দাম না পাওয়ার কারণে ঋণ শোধ করতে পারেন। সেই কারণেই সংসার চালানো কঠিন হয়ে পরে। এমনকি আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত তারা বেছে নেন।
রাজ্যের এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলো ছাত্রছাত্রীরা। এখন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃষিকাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন রাজ্যের পড়ুয়া। এই কাজে যেমন কৃষকদের উপকার হচ্ছে, ঠিক তেমনই মাসিক বৃত্তিও পাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য এরকমই অভূতপূর্ব একটি ইন্টার্নশিপের সুযোগ এসেছে। এমনকি ইন্টার্নশিপ শেষে থাকছে স্থায়ী চাকরির সুযোগ।
ভারতীয় রাসায়নিক সার কোম্পানি ইন্ডিয়ান পটাশ লিমিটেড অর্থাৎ IPL – এর উদ্যোগে এই “অমৃত ইন্টার্নশিপ”। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ইন্টার্নশিপ কার্যকর করা হয়েছে বাংলার পুরুলিয়া জেলার সিধু কানহু বীরশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। পুরুলিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী জেলা গুলির কৃষকদের বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃষিকাজের জ্ঞান প্রদানই হল এই ইন্টার্নশিপের প্রধান লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ জন ছাত্রছাত্রী এই ইন্টার্নশিপে অংশগ্রহণ করেছেন। গত তিন মাস আগে এই ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রাম শুরু হয়। ঐ ছাত্রছাত্রীরা গত তিন মাস ধরে মাঠে – ঘাটে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেছেন। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বীজশোধন, বীজতলা তৈরি, ফসল রোপণ, ফসলের নিড়ানি দেওয়া, সার প্রয়োগ, জলসেচ করা, কীটনাশক- ছত্রাকনাশক – আগাছানাশক প্রয়োগ , প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসলকে বাঁচানোর পূর্বাভাস, নির্দিষ্ট সময় ফসল কাটা, মাঠ থেকে খামারে ফসল তোলা এবং ফসল সংরক্ষণ সমস্ত বিষয়ে তারা কৃষকবন্ধুদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এই পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানী ও IPL সংস্থার কৃষি বিজ্ঞানীরা সহযোগিতা করছেন ইন্টার্নশিপের পড়ুয়াদের। ঐ সার সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনলাইনে ও সশরীরে পড়ুয়াদের ট্রেনিং দিচ্ছেন। এমনকি পড়ুয়াদের সহযোগিতা করতে বিশেষজ্ঞরা পৌঁছে আছেন কৃষকদের গ্রামে। শিক্ষিত যুব সমাজের প্রতিনিধিদের পরামর্শ পেয়ে খুশি কৃষকভাইরা। উন্নত পদ্ধতি ও স্বল্প ব্যয়ে কৃষিকাজ করার ক্ষেত্রে কৃষকবন্ধুরা নিজেদের মনের বিভিন্ন কৌতুহল দুর করছেন এই ইন্টার্নশিপরত পড়ুয়াদের কাছে।
আরো ও পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেরা দুটি স্কলারশীপ, উপকৃত লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া।
কম খরচে চাষ করে বেশি লাভ করার জন্য কৃষকদের গাইড করায় হল এই ইন্টার্নশিপের আসল লক্ষ্য। এই ইন্টার্নশিপের জন্য প্রত্যেক পড়ুয়া প্রতিমাসে ৬০০০ টাকা করে পাচ্ছেন। আরও কিছুদিন চলবে এই ইন্টার্নশীপ। তারপর এদের মধ্যে ২০ জনকে বেছে নেওয়া হবে। যারা আগামী দিনে এই সার সংস্থার এগ্রিকানেক্ট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই জন্য তারা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে স্টাইপেন্ড পাবেন। এমনকি, আগামী দিনে এই ২০ জনকে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঐ সার সংস্থা। অর্থাৎ এই ইন্টার্নশীপ দ্বারা পড়ুয়াদের কর্মসংস্থান যেমন হচ্ছে, ঠিক তেমনই রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি ঘটছে।
এই কর্মসংস্থানের আকালের সময়, অনেক কৃষক নিজেদের সন্তানদের কৃষিকাজে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়না। কৃষিক্ষেত্রে শিক্ষিত ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষের অভাবেই ফলেই দিন দিন কৃষকদের পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। কৃষকদের জন্য বিজ্ঞানসম্মত কৃষিকাজের উপায় এবং কৃষক সন্তানদের আগামী দিনে কৃষিকাজের মাধ্যমে আরও লাভজনক পেশার দিশা দেখানোই এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। আগামী দিনে কৃষিক্ষেত্রে চাষিভাইদের লাভ দ্বিগুণ করায় হল আসল লক্ষ্য। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই ইন্টার্নশীপ প্রকল্প কার্যকর করা হচ্ছে বলে খবর। এমনকি আগামী দিনে আমাদের রাজ্যে আরও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় একাধিক জেলায় এই ইন্টার্নশীপ চালু করার লক্ষ্য রেখেছে IPL সার কর্তৃপক্ষ। আগামী দিনে এই ইন্টার্নশীপের নতুন প্রকল্পের খোঁজ রাখতে IPL সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নজর রাখুন।