দেশ জুড়ে পালিত হতে চলেছে গর্বের স্বাধীনতা দিবস। ২০০ বছরের দীর্ঘ পরাধীনতার অবসান ঘটিয়ে এই দিনেই ৭৮ বছর আগে ভারতবাসী পেয়েছিল স্বাধীনতার স্বাদ। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন লক্ষ লক্ষ বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী। স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিল জাতীয় কংগ্রেস, অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর দল, গদর পার্টি, হোমরুল সোসাইটি, কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশন, স্বরাজ্য দল, ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেনস লীগ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের মতো বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠন। সেই সব মহান যোদ্ধাদের ব্রিটিশের ফাঁসির মঞ্চে, পুলিশের গুলিতে ও কারাগারে আত্মত্যাগের দ্বারায় আমরা অর্জন করেছি এই গর্বের স্বাধীনতা। তাই প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে আমরা গর্ব ও আনন্দে মেতে উঠি। সম্মান জানায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। সম্মান জানায় দেশের জাতীয় পতাকাকে। দেশের সংবিধান মেনে স্বাধীনতার সাথে বেঁচে থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে উঠি আমরা।
কিন্তু জানেন কি, স্বাধীন দেশে বাস করতে থাকা প্রতিটি নাগরিকের কিছু কর্তব্য আছে। দেশের প্রতি সেই গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য পালন আমাদের কাছে আবশ্যিক। দেশ রক্ষায় ও উন্নতির কাজে এই কর্তব্য পালন অপরিহার্য। এই কর্তব্য গুলিকে বলা হয় মৌলিক কর্তব্য। ভারতীয় সংবিধানে এই মৌলিক কর্তব্য উল্লেখিত আছে। প্রতিটি নাগরিকের কাছে এই মৌলিক কর্তব্য পালন হল দেশ গঠনের অঙ্গীকার।
ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক কর্তব্য গুলি হল –
১) সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল – দেশের সংবিধানের আদর্শ ও প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় পতাকাকে সর্বদা সম্মান জানানো।
২) ভারতের সার্বভৌম, ঐক্য ও সংহতি রক্ষা – সর্বদা দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌম রক্ষায় কাজ করা।
৩) জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল-দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান আদর্শ গুলি মনে রাখা এবং তা অনুসরণ করা।
৪) ধর্মীয়, লিঙ্গ ,ভাষাগত ও আঞ্চলিক ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া – সব রকম বৈষ্যম ভুলে সকল ভারত বাসীর মধ্যে ঐক্য ও ভাতৃত্ববোধ গড়ে তোলা। নারীদের প্রতি অসম্মান পরিত্যাগ করা।
৫) দেশরক্ষা ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ:- দেশ রক্ষার প্রয়োজনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা এবং জাতীয় সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।
৬) সামাজিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল – দেশের গৌরবময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার করা।
৭) দেশের সম্পদ রক্ষা – জনসাধারনের সম্পত্তি রক্ষা করা এবং হিংসা পরিত্যাগ করা।
৮) পরিবেশের উন্নতি ও সংরক্ষণ – বনভূমি, হ্রদ, নদী ও বন্যপ্রাণী সহ প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নতি ও সংরক্ষণ করা।
৯) বিজ্ঞানমনষ্কতা, মানবতা ও অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি:- অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার পরিত্যাগ করে বিজ্ঞানমনষ্ক ও যুক্তিনির্ভর মানসিকতা তৈরি করা।
১০) ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক উন্নতিতে সচেষ্ট হওয়া – সমাজের উন্নতির জন্য ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উন্নতির কাজে প্রচেষ্টা করা।
১১)৬-১৪ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করা – দেশের প্রতিটি শিশুর শিক্ষার মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা।
আরো ও পড়ুন :- জাগো প্রকল্পে ৫০০০ টাকা দিচ্ছে মমতা, কারা পাবেন জেনে নিন।
স্বাধীনতার প্রাক্কালে গণপরিষদ দ্বারা তৈরী সংবিধানে এই মৌলিক কর্তব্য অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৯৭৬ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকার ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথমের ১০ টি মৌলিক কর্তব্য অন্তর্ভুক্ত করে। এই মৌলিক কর্তব্য গুলিকে স্থান দেওয়া হয় সংবিধানের পার্ট – ৪ এ অংশের ৫১- এ নং ধারায়। ১১তম মৌলিক কর্তব্যটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার দ্বারা ২০০২ সালে ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। মৌলিক কর্তব্যের ধারণা গৃহীত হয়েছে সোভিয়েত রাশিয়ার সংবিধান থেকে। ভারতীয় সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই মৌলিক কর্তব্য। এই মৌলিক কর্তব্য প্রত্যেক নাগরিকের পালন করা উচিত। তবে, মৌলিক কর্তব্য পালন না করার কারণে কোন আইনি পদক্ষেপের নেওয়ার বিষয়টি সংবিধানে উল্লেখ নেই। কিন্তু মৌলিক কর্তব্যে যে বিষয় গুলি উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি পালন না করে উল্টে প্রকাশ্যে অসম্মান বা অপমান করলে, তখন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে প্রশাসন।
দেশের স্বাধীনতার দিন এই মৌলিক কর্তব্য গুলি সকলের জানা উচিত এবং জানানো উচিত। শুধু স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবস নয়, বছরের প্রতিটি দিন এই মৌলিক কর্তব্য পালন করা আমাদের আবশ্যিক দায়িত্ব। তবেই দেশের উন্নতি ঘটবে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের প্রতি সঠিক সম্মান প্রদর্শন করা হবে।