বিশ্বের অর্থনীতিতে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ভারত চতুর্থ স্থানে রয়েছে। জাপানকে পেরিয়ে ২০২৫ এর মে মাসে এই স্থান দখল করেছে ভারত। কিন্ত পারচেসিং পাওয়ার প্যারিটি (PPP) রিপোর্ট এক অন্য কথা বলছে। আগামী ১৩ বছরের মধ্যেই আমেরিকাকেও সরিয়ে ভারত অর্থনীতি দ্বিতীয় স্থানে আসবে। আমেরিকার সাথে ভারতের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই থাকে। হাতে শুধু ১৩ বছরের অপেক্ষা! ভারতবাসী ভারতকে বিশ্বের অর্থনীতির দ্বিতীয় স্থানে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার শুধু দিন গোনার পালা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নতুন শুল্কহারের কারণেই বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে এক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক কর ধার্য করেছে। আর এখানেই ভারতীয় অর্থনীতিতে সরাসরি একটা প্রভাব আসতে পারে। ৫০ শতাংশ শুল্ক করার মধ্যে রয়েছে 25% বেসলাইন শুল্ক এবং অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। যদিও আমেরিকার রাশিয়ার ওপর এই কর ধার্যের মধ্যেই ভারতের জন্য এর একটি সুপ্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। EY তাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ভারতের জিডিপি পৌঁছে যাবে ৩৪.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর জনসংখ্যা। ২০২৫ সালে যেখানে গড় বয়স মাত্র ২৮.৮ বছর, সেখানে বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি ভারতের সঞ্চয় হার বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর্থিক কাঠামোতেও ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে—সরকারি ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ২০২৪ সালের ৮১.৩ শতাংশ থেকে ২০৩০ সালে কমে হবে ৭৫.৮ শতাংশ। এর বিপরীতে বিশ্বের অন্য বড় অর্থনীতিগুলির ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
আরোও পড়ুন:- সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, বিজ্ঞপ্তি জারি নবান্নের?
যদিও আমেরিকার শুল্ক আরোপ করার ভারতের জিডিপি সর্বোচ্চ ০.৯ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে EY এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত এই ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা খুব সহজেই সামনে উঠতে পারবে তার শক্তিশালী আভ্যন্তরীণ চাহিদা, নতুন বাণিজ্য অংশীদারিত্ব ও রফতানির বিকল্প বাজার খুঁজে নেওয়ার মাধ্যমে। অল্প কিছু বছরের মধ্যেই এই ক্ষতির হার কমে গিয়ে ০.১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সচেষ্ট হবে ভারত। অর্থাৎ আমেরিকা যতই ভারতকে চাপের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করুক না কেন, ভারত তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিজের গতিতে এগিয়ে যাবে বিশ্বের দরবারে শীর্ষ অবস্থান করতে।
বহুজাতিক অ্যাকাউন্টিং সংস্থা আর্নেস্ট অ্যান্ড ইংয়ের ইওয়াই ইকোনমিক ওয়াচ আগস্টের একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতি পৌঁছে যাবে ২০.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। আগামী ২০৩৮ সালের মধ্যে এই পরিমাণ পৌঁছে যাবে ৩৪.২ ট্রিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ আগামী 13 বছর পর ভারতকে বিশ্বের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় জায়গা থেকে সরানোর আর কোন জায়গায় থাকবে না। ২০৩০ সালের পরেও যদি ভারত এবং আমেরিকা যথাক্রমে ৬.৫ শতাংশ এবং ২.১ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি বজায় রাখে, তাহলে ২০৩৮ সালের মধ্যে পিপিপি-র দিক থেকে মার্কিন অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত।
বিশ্বের মধ্যে অর্থনীতিতে অন্যান্য দেশকে ছাপিয়ে ভারতের শীর্ষ উঠে আসার যে সম্ভাব্য কারণগুলো রয়েছে সেগুলি হল: ভারতের তুলনামূলক শক্তি, দেশের তরুণ ও দক্ষ কর্মীবাহিনী, শক্তিশালী সঞ্চয় ও বিনিয়োগের হার টেকসই ঋণ প্রোফাইল যা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভারতকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেবে। আজ থেকে 13 বছর পরেই ভারত হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ।