কিছুদিন আগে একটি সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করেছিলেন আগামী নির্বাচনের আগেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অনুদানের পরিমাণ বাড়ানো হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে বাংলার দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলাদের আরো উৎসাহ দেখা দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর জন্য যে সকল প্রকল্পের সূচনা করেছেন তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হল লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার আর্থিকভাবে দুর্বল মহিলারা স্বনির্ভর হতে পেরেছেন এবং তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেকটাই উন্নয়ন ঘটেছে।
রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প সূচনা করার প্রধান লক্ষ্য ছিল, রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের মহিলাদের আর্থিক স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। এর ফলে তারা নিজেদের প্রয়োজন বা চাহিদা নিজেরাই পূরণ করতে পারবেন। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। অনেক গৃহবধূ এই প্রকল্পের অনুদান পেয়ে তা জমিয়ে ছোট একটি ব্যবসা শুরু করেছেন, যেখান থেকে প্রত্যেক মাসে উপার্জন করতে পারছেন। সর্বোপরি বলতে গেলে রাজ্যজুড়ে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলাদের আশা ভরসার একমাত্র মাধ্যম এই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প। রাজ্যজুড়ে লক্ষ লক্ষ মহিলারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক মাসের নির্দিষ্ট সময়ে অনুদান পেয়ে থাকেন। যদিও লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প শুরুর প্রথম দিকে অনেকটাই কম আর্থিক অনুদান দেওয়া হতো, তবে বর্তমানে জেনারেল ক্যাটাগরির মহিলারা মাসিক অনুদান হিসেবে ১০০০ টাকা এবং তপশিলি উপজাতির মহিলারা মাসিক অনুদান হিসাবে ১২০০ টাকা পেয়ে থাকেন। যদিও অনেক মহিলারা চাইছিলেন এই অনুদানের পরিমাণ যদি আরেকটু বরাদ্দ করা হতো তাহলে তারা অনেকটাই উপকৃত হতেন।
সম্প্রতি একটি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০২৬ এর নির্বাচনের আগে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের অনুদান ২১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। যেহেতু প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বেড়ে চলেছে, সেই দিকে তাকিয়ে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের অনুদানের মাত্রা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১০০ টাকা করে কোন ক্যাটাগরির মহিলারা মাসিক অনুদান পাবেন?
আরোও পড়ুন:- জব কার্ড যোজনা কি? জব কার্ডের সুবিধা কি? আবেদন করবেন কিভাবে এই কার্ডের জন্য।
আপাতত জানা যাচ্ছে, ২১০০ টাকা মাসিক অনুদান রাজ্যের সকল দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলাদের জন্য বরাদ্দ হবে না। যে সমস্ত পরিবারের মহিলাদের পারিবারিক আয় ২.১ লক্ষ কম অর্থাৎ যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল, একমাত্র তাদের একাউন্টে প্রত্যেক মাসে ২১০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এই রাজ্যের এখনো অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক কাঠামো অনেকটাই দুর্বল প্রকৃতির। এইজন্যই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের কয়েক লাখ মহিলার একাউন্টে বিশাল পরিমাণ অর্থ ঢুকতে চলেছে এমনটা আশা করা যাচ্ছে।
যদিও বিরোধী দলের থেকে এমন কথা বলা হচ্ছে, বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী আসন লাভের জন্যই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে অনুদান বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারা এটাও জানিয়েছেন, এর আগের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল সংসদের জয়ের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ছিল বাংলার মহিলাদের সাপোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবারও সেই হাতিয়ারকে কাজে লাগাতে চাইছেন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে। তবে এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে উপকৃত হতে চলেছে রাজ্যের মা-বোনেরা। লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের মাসিক অনুদান যদি ২১০০ টাকা করে করা হয়, তাহলে রাজ্যের মহিলাদের আরো অন্যান্য পরিসরে এই অর্থ ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। তারা তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবেন এছাড়াও তাদের নিজেদের শখ পূরণ থেকে শুরু করে ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করা সর্বোপরি আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার আরো একধাপ পূরণ হতে চলেছে। এখন কবে থেকে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের অনুদান বাড়ানো হবে সে ব্যাপারে জল্পনা কল্পনা চলছে তুঙ্গে। যদিও সম্ভাবনা রয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেই প্রস্তাব গৃহীত হয়ে যাবে। লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ব্যাপকতা আরো প্রসারিত হতে চলেছে আগামীতে। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের পর রাজ্যের মহিলাদের উৎসাহ আরো অনেক গুন বেড়ে গিয়েছে।
PDF ডাউনলোড করুন | ক্লিক করুন |