পুজোর আগেই টোটো চালকদের জন্য নতুন নিয়ম। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষা।

টোটো বা ই-রিকশা এখন আমাদের কাছে একটা খুবই পরিচিত যান। রাজ্যের পরিবহন ক্ষেত্রে তৃণমূল স্তরে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এই টোটো। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে টোটোর উপর ভরসা করেন অনেক মানুষ। প্রান্তিক মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত সকলেই একবার হলেও টোটোর পরিষেবা গ্রহণ করেছে। এমনকি ক্যাব অ্যাপ গুলি বিভিন্ন স্থানে মোটর বাইকের মতো টোটো পরিষেবা শুরু করেছে।

পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সময় টোটো একটি পরিবেশ বান্ধব যান। পরিবেশ দূষণে টোটোর অবদান খুব কম। সেই সঙ্গে, করোনা মহামারী পরবর্তী কর্মসংস্থানের আকালের সময় টোটো লক্ষ লক্ষ মানুষের রুজি রোজগার জুগিয়েছে। নিজের গচ্ছিত টাকা ভেঙে কিংবা ঋণ করে ১ লাখ টাকা ইনভেস্টের দ্বারা টোটো কিনে অনেক মানুষ নিজেদের সংসার চালানোর জন্য উপার্জন করেছেন। টোটো গাড়িতে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। গাড়ি চার্জ দিতেও বিদ্যুৎ খরচ সাধ্যের মধ্যেই থাকে। তাই টোটো জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েছে। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও ছোটখাটো পণ্য পরিবহন, অস্থায়ী ব্যবসা ও দোকানের কাজে টোটো ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজ্যে গ্রাম থেকে শহর, দিন দিন টোটোর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

পরিবেশ বান্ধব হলেও টোটো পরিবহন ব্যবস্থায় একাধিক সমস্যা তৈরি করেছে। টোটো চালোনোর জন্য কোন লাইসেন্স লাগেনা ফলে যে কোন রাস্তায় টোটো চলতে থাকে। দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বড় রাস্তায় টোটো যানজট সৃষ্টি করে। পথমধ্যে একাধিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এই টোটো চালকরা। মফঃস্বল ও ছোট শহরে টোটো গাড়ির বাড়বাড়ন্ত হওয়ার কারণে একাধিক রুটের বাস বন্ধ হয়ে গেছে। টোটো চালক ও অটো চালকদের মধ্যে দ্বন্দ আরও একটা সমস্যা। এমনকি অনেক টোটো চালকদের বিরুদ্ধে জোর করে বেশি ভাড়া নেওয়া এবং যাত্রীদের সাথে অভদ্র ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকমাস আগে এক টোটো চালকদের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগে উঠেছিল কলকাতার নিকটবর্তী নিউটাউনে।

আরো ও পড়ুন :- দেশের গর্বের স্বাধীনতা দিবস। এই মহান সন্ধিক্ষণে দেখে নিন নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য।

সেই টোটো বাড়বাড়ন্ত রুখতে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের পরিবহন দপ্তর টোটো চালকদের জন্য এক গুচ্ছ আইন আনতে চলেছে। রাজ্যের মাননীয় পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, টোটোর জন্য আইন তৈরি করা হয়ে গেছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই সেটি কার্যকর করা হবে। খুব সম্ভবত এবছর পুজোর আগেই এই আইন বলবৎ হবে।

toto drivers

টোটোর জন্য পরিবহন দপ্তরের আইনে সম্ভাব্য কি নিয়ম থাকছে , সেগুলি দেখে নেওয়া যাক।

রাজ্যের সমস্ত টোটোকে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্টের অধীনে আনা হবে। প্রত্যেকটি টোটোকে পরিবহন দপ্তরের অধীনে রেজিষ্টার করতে হবে। প্রত্যেকটি টোটোকে নাম্বার প্লেট দেওয়া হবে। সহজে চিহ্নিতকরণের জন্য প্রতিটি টোটোতে QR CODE স্টিকার লাগানো থাকবে। টোটো চালকদের জন্য ড্রাইভিং লাইন্সেস বাধ্যতা মূলক হতে পারে। প্রধান রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়কে নিষিদ্ধ হতে পারে টোটো চালানো। প্রতিটি টোটোর জন্য নির্দিষ্ট রুট থাকতে পারে। গ্রামের টোটোর শহরে যাত্রী পরিবহনের উপরও নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে। ট্রাফিক আইন ভাঙলে ও দুর্ঘটনায় দায়ী হলে জরিমানা ও গ্রেপ্তার হওয়ার শাস্তিও থাকতে পারে। যাত্রীদের সাথে অভব্য আচরণের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। 

পরিবহন দপ্তর এই নিয়ম জারির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেই প্রকাশ্যে আসবে সেখানে কি কি নিয়ম থাকছে।

এই আইন জারি হলে পরিবহন ব্যবস্থার আরও উন্নতি ঘটবে। টোটোদের নির্দিষ্ট নিয়মের বেড়াজালে আনতে পারলে পথদুর্ঘটনা, যানজট ও টোটো চালকদের  বাড়বাড়ন্ত কমতে পারে।

তবে, বিশেষজ্ঞদের দাবি, লোক দেখানো আইন বলবৎ করে টোটোর বাড়বাড়ন্ত কমানো সম্ভব নয়। যে কোন টোটো বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে উঠলে তার বিরুদ্ধে সঠিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন ঘুষের বদলে নিয়ম ভঙ্গকারী টোটো চালকদের ছাড় দিলে এই আইন ফলপ্রসূ হবেনা। তাছাড়া বেশিরভাগ টোটোর মালিক শাসক দলের নেতা ঘনিষ্ঠ এবং শাসক দলের ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত, তাই  পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না।

তবে, টোটো চালকদের জন্য এই বিশেষ আইন সত্যিই খুব প্রয়োজনীয় ও জরুরী। সমস্ত টোটো চালকদের একটি নির্দিষ্ট নিয়মের আওতায় আনলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। টোটো যাত্রীরা আরও ভালো পরিষেবা উপভোগ করবেন। সেই সঙ্গে, রাস্তায় যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে। জলবায়ুর এই সংকটের সময় পরিবেশ বান্ধব টোটো পরিষেবা বাড়ুক। কিন্তু সেই টোটো পরিষেবার যাত্রা যেন সুস্থ ও আরামদায়ক হয়।

Leave a Comment

Join Group Join Group