সাইবার জালিয়াতির ঘেরাটোপে সাধারণ গ্রাহক, সামান্য অসর্তকতার মাশুল ফাঁকা অ্যাকাউন্ট। জানুন সুরক্ষার উপায় ?

বর্তমান সময়ে সাইবার জালিয়াতি যেভাবে বিশ্বব্যাপী জাল ছড়িয়েছে, তার জন্য সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে সাইবার আক্রমণকারীরা অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের তথ্য চুরি করছে এবং তার মাধ্যমে আর্থিকভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে বর্তমান সময়ে এটা একটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

প্রায়শই শোনা যায় বিভিন্ন ব্যক্তির একাউন্ট থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। একটি মাত্র ভুল ফোন রিসিভের মাধ্যমে কিংবা ওটিপি আদান-প্রদানে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কয়েক মিনিটের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। যদিও সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা এই সমস্ত সাইবার জ্বালিয়াতি রুখতে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন, তবে সাইবার ক্রাইম অপরাধীরা নিত্য নতুন জাল বিস্তৃত করে নিয়েছে, যে তাদের কাছ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা অনেকটাই বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বর্তমান সময়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন প্রায় প্রত্যেক মানুষ। আর এই এন্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ একটি খুব সহজ অ্যাপ, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র কথা বা ফটো আদান প্রদানের সহজ মাধ্যম নয়, সম্প্রতি WhatsApp হয়ে উঠেছে নতুন জালিয়াতির বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। 

আরো ও পড়ুন:- LIC নতুন কর্মী নিয়োগ ২০২৫|৮৪১ পদে আবেদন শুরু

আপনি যদি একটু সতর্ক না থাকেন, তাহলে আপনার একটুখানি ভুলের জন্য আপনার ব্যাংক থেকে খোয়া যেতে পারে আপনার জমানো অর্থ। 

সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপে এসেছে নতুন প্রতারণার ফাঁদ। কিভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহককে জালিয়াতের ফাঁদে ফেলছে সাইবার ক্রাইম অপরাধীরা? 

আপনাদের প্রত্যেককে সচেতন করতে আজকের এই প্রতিবেদন। কিভাবে এই জালিয়াতি চক্র কাজ করছে, এর থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন – এ সকল তথ্যই থাকছে আজকের এই প্রতিবেদনে। 

এতদিন তো দেখে এসেছি আমরা মোবাইলে ফোন করে বিভিন্ন জালিয়াতি সংস্থা থেকে ক্রাইম অপরাধীরা নিজেদেরকে ব্যাংকিং আধিকারিক পরিচয় দিয়ে গ্রাহকের ব্যাংকিং ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং তারপরেই কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রাহক বুঝতে পারে, তাঁর অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে গিয়েছে। এইবার এই জালিয়াতি এসে পৌঁছেছে হোয়াটসঅ্যাপে। 

স্ক্রিন মিররিং ফ্রড :- জালিয়াতি ক্রাইম করা অপরাধীরা নিত্যনতুন ফাঁদে ফেলতে বদ্ধপরিকর সাধারণ মানুষদের। সম্প্রতি তাদের নতুন পন্থা হলো হোয়াটসঅ্যাপের স্ক্রিন মিররিং ফ্রড কেলেঙ্কারি। ওয়ানকার্ড সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই সাধারণ নাগরিকদের এই ব্যাপারে সর্তকতা জারি করেছেন। 

কিভাবে এই জালিয়াতি কাজ করছে? 

১) প্রথমেই বিভিন্ন জালিয়াতি ক্রাইম করা অপরাধীরা সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকের আধিকারিক বা গ্রামীণ সহায়তা কর্মী হিসেবে পরিচিতি দেয়। অনেক গ্রাহক ঠিক এই ফাঁদেই পা দেয়। 

২) দ্বিতীয়ত, যখন এই সমস্ত ক্রাইম অপরাধীরা গ্রাহককে হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলে স্ক্রিন শেয়ার করতে বলেন, তখন তাঁরা খুব সহজেই গ্রাহকের ওটিপি এছাড়া পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাক্সেস পেয়ে যান। 

৩) বিশেষ করে এই ক্রাইম অপরাধীরা গ্রাহককে সাহায্য করার নাম করে বিভিন্ন নির্দেশিকা দেওয়ার কথা বলেন। আর এই অজুহাতে গ্রাহককে ভিডিও কলে কখনো স্যুইচ করতে, কখনও ওটিপি বলার কথা বলেন। এমনকি অনেক সময় এই সাইবার অপরাধীরা গ্রাহককে একটি লিংক বা কোড পাঠিয়ে তাদেরকে সেটা ইন্সটল করতে বলেন। অনেক গ্রাহক সেই লিংক বা কোড ইনস্টল করা মাত্রই তাদের ফোনের যাবতীয় তথ্য অনেক দূর থেকেও সাইবার অপরাধীরা গ্রাহকের ফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এভাবেই একজন গ্রাহকের একটু ভুলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। 

চুরি করা তথ্য কিভাবে ব্যবহার করা হয় :- সাইবার ক্রাইম অপরাধীরা এরপর গ্রাহকদের চুরি করা তথ্য নিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে UPI অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস পেয়ে যান। অতঃপর ব্যাংক একাউন্ট খালি করা শুরু করে। 

কিভাবে এই সাইবার ক্রাইম অপরাধীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন :- সবসময় মনে রাখবেন আপনার করা একটি মাত্র ভুলের জন্য আপনাকে ভুক্তভোগী হতে হবে। এর জন্য আপনাকে সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

১) আপনার ফোনে ট্রুকলার থাকলে সেটা দিয়ে কলারের পরিচয় যাচাই করুন। অফিসিয়াল কোন নম্বর থেকে ফোন আসলেও প্রথমেই যিনি কল করছেন তার পরিচয় সম্পর্কে ভালো করে অবগত থাকতে হবে।

২) আপনার চেনা জানা একমাত্র ব্যক্তিগত সম্পর্কে রয়েছে তাদের ছাড়া অন্য কোন অচেনা ব্যক্তির সাথে ভিডিও কলে স্ক্রিনশিয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। 

৩) যেকোনো অজানা অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করা বন্ধ করুন।

৪) ১ সর্বদা অফিসিয়াল নম্বর থেকে কলারের পরিচয় যাচাই করুন।

৫) সন্দেহজনক কোন ব্যক্তির ফোন আসলে সেই ব্যক্তির নাম্বারটি সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করুন। 

৬) সন্দেহজনক কোন ব্যক্তির নম্বর থেকে ফোন আসলে আপনি আতঙ্কিত না হয়ে cybercrime.gov.in অথবা 1930 নম্বরে অভিযোগ জানান।

সর্বশেষ এটাই বলার, বর্তমান অবস্থায় সাইবার ক্রাইম যেভাবে জালের মতন বিস্তার লাভ করেছে, এর জন্যই প্রত্যেকটি গ্রাহককে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। আপনার সচেতনতাই আপনাকে বৃহত্তর ভুল থেকে বাঁচাবে।

Leave a Comment

Join Group Join Group