১৫ই আগষ্ট দেশের গর্বের স্বাধীনতা দিবস। দেশজুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীন ভারতের ঐতিহ্য মেনে এবারও দিল্লির রেডরোডের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রশাসনিক প্রধান নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অনেক উচ্চপদস্থ মন্ত্রী ও আধিকারিকবৃন্দ। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই দেশের প্রতিটি মানুষকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানান। দেশের বীর শহীদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দেশ্যে সম্মান জানান।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে এল অনুপ্রবেশকারী সমস্যা। বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা দেশের জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অনুপ্রবেশকারীরা জোর করে দেশের তরুণ প্রজন্মের ভাতের থালা কেড়ে নিচ্ছে ও জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে। মা – বোনেদের সম্মান কেড়ে নিচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীরা দেশের আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এটা সহ্য করা হবেনা বলে তিনি জানান। নতুন “জনবিন্যাস অভিযানের” দ্বারা এই সমস্যা সমাধান করার বিষয়টি তিনি দেশের সামনে তুলে ধরেন। অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর ডাক দেন তিনি।
ভারতের অন্যতম সমস্যা হল অনুপ্রবেশ। প্রতিবছর পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমার থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশ কারীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সীমান্তে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া না থাকা ও নিরপত্তার ঢিলেঢালার কারণে সহজে অনুপ্রবেশকারী এদেশে প্রবেশ করছে। বেআইনি উপায়ে সহজে তারা ভারতের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও প্যান কার্ড তৈরি করে এদেশে বসবাস শুরু করছে। ইহা ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য দেশের জনগণের জীবিকা, খাদ্য ও জমির সমস্যা বাড়ছে। ক্ষমতায় বসেই নরেন্দ্র মোদী সরকার এই সমস্যা সমাধানে কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসামের মতো রাজ্যে NRC চালু করা হয়। পার্লামেন্টের পাশ হয় CAA বিল। বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন সম্পর্কিত SIR কার্যকর করা হয়েছে। দেশজুড়ে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তার করার কাজ চলছে। বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের নিজের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য “পুশ ব্যাক” নীতি গ্রহণ করেছে কেন্দ্র সরকার। ভোট ব্যাংকের কারণে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ায় বিরোধীদের বারবার কটাক্ষ করেছে প্রধানমন্ত্রী। অনুপ্রবেশকারীদের সহজে ভোটার কার্ড ও আধার তৈরি করে দিচ্ছে বিরোধীরা বলেও বারবার অভিযোগ জানিয়েছে কেন্দ্র।আগামী দিনে অনুপ্রবেশকারী সমস্যা মেটানোর জন্য সরকার যে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে তারই আভাস পাওয়া গেল মোদীর বক্তব্যে।
আরো ও পড়ুন:- পুজোর আগেই টোটো চালকদের জন্য নতুন নিয়ম। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষা।
স্বাধীনতার শুভদিনে ঐতিহাসিক লালকেল্লা থেকে অনুপ্রবেশকারী ইস্যু তুলে ধরায়, বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকেও। বিরোধীরা জানিয়েছেন, দেশের অনুপ্রবেশ সমস্যার জন্য দায়ী কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দেশের সীমান্তে নিরপত্তা দিতে ব্যার্থ। অনুপ্রবেশকারীদের সহজে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি সুযোগও কেন্দ্র সরকারের ব্যর্থতার কারণে বলে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। আগে দেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও কড়া নিরপত্তার ব্যবস্থা করা এবং সহজে আধার কার্ড ও ভোটার তৈরির সুযোগ বন্ধ করার বিষয়টি কেন্দ্র সরকারকে কার্যকর করতে হবে বলে তুলে ধরেছে বিরোধীরা। অনুপ্রবেশকারী আটকানোর নামে ভিন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী শ্রমিকের উপর অত্যাচার ও গ্রেপ্তার বন্ধ করার অনুরোধ করেছে বিরোধীরা।NRC ও SIR এর নামে দেশের মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে দেশজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে বিরোধীরা।
আগামী দিনে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে দেশের রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হতে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। অনুপ্রবেশ সমস্যার সমাধান অবশ্যই হোক। কিন্তু সুনির্দিষ্ট উপায়ে সমস্যার সমাধানের পক্ষে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের প্রকৃত মানুষের স্বার্থ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই দিকটা অবশ্যই নজর দিতে হবে। এই ইস্যুতে তাড়াহুড়ো করলে দেশজুড়ে অশান্তি ঘটতে পারে বলেও অনুমান করছে এক্সপার্টরা।