ফের ভুয়ো ভোটার কার্ড ব্যবহারের অভিযোগ উঠল এরাজ্যে। আরও এক ভুয়ো ভোটার কার্ড ব্যবহারকারী ধরা পড়ল বাংলায়। ভুয়ো ভোটার কার্ড ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে এক পঞ্চায়েত কর্মীর বিরুদ্ধে। এই রকম আশ্চর্য জনক ঘটনা সামনে আসার পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ বিধানসভা কেন্দ্রে এমনই খবর পাওয়া গেছে। বনগাঁর ব্লকের সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানেই খোঁজ পাওয়া গেছে এই ভুয়ো ভোটারের। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সাহিদ মন্ডল । যিনি ঐ পঞ্চায়েতের পাটশিমুলিয়া ২৪৯ নং বুথের ভোটার। শুধু তাই নয়, এই অভিযুক্ত ব্যক্তি নাকি ঐ পঞ্চায়েতের ভিসিটি অর্থাৎ কীটপ্রতঙ্গ নিয়ন্ত্রক দলের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন।
তার বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ও ভুয়ো ভোটার কার্ড ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা সুমন অধিকারী। ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বনগাঁ BDO অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে বিজেপির তরফে। বিজেপির অভিযোগ, অভিযুক্ত সাহিদ মন্ডল এদেশের বাসিন্দা নয়। সাহিদ আসলে বাংলাদেশের বাসিন্দা। সে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ভারতের সীমান্ত পার করে বনগাঁর ঐ গ্রামে বসবাস শুরু করে। বিজেপির আরও অভিযোগ, ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতে এসে বনগাঁর বাসিন্দা শাবানা মণ্ডলকে বিবাহ করেছেন এবং তার স্ত্রী সাবান মন্ডলের বাবা অর্থাৎ শ্বশুর মহাশয় ওহিদুল মণ্ডলকে নিজের বাবার পরিচয় দিতে বেআইনি ভাবে এদেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করেছে। তাই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি।
আরো ও পড়ুন:- কল্যাণীর এইমস-র বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর, কল্যাণী এইমসের পাল্টা জবাব।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তির দাবি, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। তিনি এদেশেরই বাসিন্দা এবং আবিবাহিত। তাই তার বিরুদ্ধে ওঠা জাল ভোটার কার্ড ও বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই অভিযোগ সামনে আসার পরই, ঐ পঞ্চায়েতের প্রধান জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ঐ অঞ্চলের বাসিন্দা। সেই সূত্রেই তিনি পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও দাবি করেছেন ঐ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কামরুন নাহার মন্ডল। কিন্তু ঐ সহিদ মন্ডল আদৌ বিবাহিত কিনা সেটা তিনি বলতে পারেননি। অন্যদিকে, বনগাঁ ব্লকের মাননীয় BDO সাহেব জানিয়েছেন, সাহিদ মন্ডল নামে এক ব্যক্তির নামে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে এদেশে বসবাস করার অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হবে। সঠিক তদন্তের দ্বারা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।
বাংলাদেশ থেকে এদেশে বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করে সরকারি পঞ্চায়েতে কাজ। এমন চঞ্চলকর খবর সামনে আসার পরই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে আরও একবার রাজ্য সরকার ও শাসক দলকে তীব্র আক্রমণ করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। শুধু মাত্র ভোট ব্যাংকের জন্য রাজ্যের শাসক দল বাংলাদেশীদের এরাজ্যে বেআইনি ভাবে বসবাস করার সবরকম সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে গেরুয়া শিবির। রাজ্য সরকার ও শাসক দলের সহযোগিতায় বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মানুষ বেআইনি ভাবে পশ্চিমবাংলায় এসে অসৎ উপায়ে খুবই সহজে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ও ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করছে বলে অভিযোগ করে রাজ্য বিজেপির নেতারা। তার সাথে গেরুয়া শিবির আরও একবার রাজ্যে SIR (ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিসান) এবং NRC (ন্যাশনাল রেজিষ্টেশন ফর সিটিজেনশিপ) করার দাবী তুলেছে। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এই SIR এবং NRC দ্বারা বাংলাদেশ থেকে আগত বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের এরাজ্য থেকে নির্মূল করার ডাক দিয়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে, রাজ্যের শাসক দলের দাবি কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দ্বারা সীমান্তে নিরপত্তার গলদের কারণে এদেশে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি, অনুপ্রবেশকারীদের সহজে এদেশের জাল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার পিছনে কেন্দ্র সরকারের ব্যর্থতা আছে বলে দাবি করে TMC নেতৃত্ব। বনগাঁতে এই রকম চাঞ্চল্যকর ঘটনার সামনে আসার পরে রাজ্যের শাসক দল দাবি করে, যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে রাজ্য প্রশাসন সঠিক তদন্তের পর কড়া আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে TMC নেতৃত্ব আরও যোগ করেন যে, বিজেপি তার রাজনীতিক স্বার্থসিদ্ধির কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে টার্গেট করে অযথা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী হিসাবে দাগিয়ে হেনস্থা করছে। এই রকম ঘটনা ঘটলে বিজেপি নেতৃত্বের মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধেও কড়া আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল।