রাজ্য সরকার রাজ্যের জনগণদের জন্য বিভিন্ন রকম প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, এই প্রকল্প গুলো থেকে রাজ্যবাসী অনেকটাই আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। রাজ্য সরকারের অভিনব উদ্যোগ হল ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড চালু করা। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার খরচ অনেক, এর ফলে দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এই খরচ ব্যয় করা অনেকটাই কষ্টকর ব্যাপার। রাজ্যের দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যাতে সঠিক চিকিৎসা পেতে পারে তার জন্যই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করার সাথে সাথে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই কার্ড হাসপাতালে কিংবা নার্সিংহোমে ইস্যু করালে বিনামূল্যে চিকিৎসা করার সুযোগ পাবেন রাজ্যবাসী। এতদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ উপভোক্তা সুবিধা পেয়েছেন। কঠিন ও জটিল রোগের জন্য স্বাস্থ্য সাথী কার্ড একটি অভিনব উদ্যোগ। সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার মাধ্যম এই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। তবে 2025 সালের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার ৫০০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে। অর্থাৎ আগের থেকে আরও বৃহৎ পরিসরে রাজ্যবাসীর জন্য পরিষেবা দিতে চলেছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। এই কার্ডের জন্য আপনি যদি এখনো আবেদন না করে থাকেন, তাহলে অতি শীঘ্রই এই কার্ডের জন্য আবেদন করে ফেলুন। আবেদন কিভাবে করবেন, কি কি ডকুমেন্ট লাগবে, এছাড়াও ২০২৫ সালের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে আরও কি বাড়তে সুবিধা পাবেন সেই সম্পর্কিত তথ্যও থাকতে প্রতিবেদনে।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে নতুন কি আপডেট দিয়েছে রাজ্য সরকার :-
১) এতদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে একজন রোগীর জন্য পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। বর্তমানে যেভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার খরচ বাড়ছে তার জন্য 5000 টাকার মধ্যে একজন রোগীকে দেওয়া সমস্ত প্রকার টেস্ট করানো সম্ভবপর হচ্ছে না। এর জন্য ২০২৫ এর প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর বরাদ্দ অনুদান বাড়ানো হলো। এখন থেকে একজন রোগী ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পেয়ে যাবেন এই কার্ডের মাধ্যমে।
২) এছাড়াও স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর সঠিক ব্যবহার নিয়েও জনগণদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছিল। অনেক রোগীর পরিবার জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া গেলেও, বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থেকে কোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।
৩) স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে রাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল গুলিতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে এবার থেকে বেসরকারি হাসপাতাল গুলিতেও জরুরি পরিষেবা পাবেন রোগীরা।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মূল লক্ষ্য:- স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এর মূল লক্ষ্য হল যাদের সকল দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হাসপাতালে জরুরী পরিষেবা পেতে পারে, এছাড়া নগদহীন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ায় এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
আরোও পড়ুন:- অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন? জেনে নিন পদ্ধতি।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করার নতুন পদ্ধতি:-
২০২৫ সাল থেকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া পদ্ধতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এর জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১) প্রথমে আপনাকে গুগলে Swasthya Sathi card” লিখে সার্চ করতে হবে।
২) এছাড়া আপনি সরাসরি swasthyasathi.gov.in এই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন।
৩) এরপর হোমপেজ থেকে এপ্লাই অনলাইন প্রসেস ক্লিক করে Online Application for Swasthya Sathi Card” অপশনটি নির্বাচন করুন।
৪) নতুন পদ্ধতিতে প্রথমে আপনাকে উপভোক্তা হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের মহিলা প্রধানের নামে নিবন্ধন দিয়ে শুরু করতে হবে।
৫) এরপর আপনার জেলা, ব্লক/পৌরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং গ্রামের নাম নির্বাচন করুন।
৬) এরপর উপভোক্তার নাম লিখুন এবং যদি কোনো নির্দিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যুক্ত না থাকেন, তাহলে “Self” অপশন সিলেক্ট করুন।
৭) পরিবারের প্রধানের নাম (বাবা বা স্বামী) লিখুন।
উপভোক্তার বয়স, লিঙ্গ, সংখ্যালঘু স্ট্যাটাস (হ্যাঁ/না) এবং জাতি নির্বাচন করুন।
৮) রেশন কার্ড নম্বর, আধার নম্বর এবং মোবাইল নম্বর দিন। বৈবাহিক অবস্থা নির্বাচন করুন এবং যদি শহরের বাসিন্দা হন তবে বাড়ির নম্বর দিন। এরপর আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা এবং পিন কোড লিখুন। আপনার কর্মসংস্থানের অবস্থা নির্বাচন করুন।
৯) এরপর উল্লেখিত নথি আপলোড করুন। আপনার আধার কার্ডের একটি পিডিএফ কপি আপলোড করুন।
১০) এরপর পরিবারের সদস্যদের তথ্য যুক্ত করুন। “Add Member” অপশনে ক্লিক করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, রেশন কার্ড নম্বর, আধার নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং বৈবাহিক অবস্থা পূরণ করুন এবং তাদের আধার কার্ডের পিডিএফ কপি আপলোড করুন।
১১) সমস্ত সদস্যদের তথ্য যুক্ত করার পর “Verify” অপশনে ক্লিক করুন। আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি আসবে। ওটিপি দিয়ে “Validate” অপশনে ক্লিক করুন।
১২) সাবমিট করার পর আপনি একটি রেফারেন্স নাম্বার পাবেন। এই রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে আপনি পরবর্তীতে আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বারে এসএমএস পাঠানো হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে আপনার নিকটতম ব্লক বা পঞ্চায়েত অফিস থেকে আপনাকে ছবি তোলার জন্য কোন বা এসএমএস করে জানানো হবে। আপনার ছবির তোলার পরে আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড তৈরি হয়ে যাবে।
আপনি যদি এখনো স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদন না করে থাকেন, তাহলে রাজ্য সরকারের এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার জন্য খুব শীঘ্রই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই কার্ডের যাবতীয় সুবিধা উপভোগ করুন।