বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, দুর্যোগের পূর্বাভাস, এর মধ্যেই দীঘার সৈকতে উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়।

সবেমাত্র দুর্গাপুজোর সমাপ্তি ঘটেছে। সমস্ত আনন্দ উত্তেজনা নিয়ে ছুটি কাটিয়ে এবার দৈনন্দিন কাজে ফেরা, অফিস কর্মচারীদের আবার গুটিগুটি পায়ে অফিসের উদ্দেশ্যে একঘেয়েমি রুটিন। তবে কিছু কিছু অফিস লক্ষ্মীপুজোর পর খুলবে, সেই জন্য অনেকেই দশমীর পরের এই দুই দিন ছুটি কাটাতে দীঘার সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছে। এই বছর দুর্গাপূজোতেও অনেক পর্যটক দিঘা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে এসেছিলেন সমুদ্রকে উপভোগ করতে। এই বছর বর্ষা যেন কিছুটা খামখিয়ালি প্রকৃতির। সারা সেপ্টেম্বর মাস পেরিয়ে অক্টোবর মাস পড়ে গিয়েছে তবুও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও জোরালো বৃষ্টিপাত হয়েই চলেছে। দক্ষিণের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের দরুন বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে। অন্যদিকে উত্তরে জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য অনেক জায়গায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, পুজো এবং পূজোর পরেও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, এরজন্য এখনো ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তরের কথা অনুযায়ী, সেই রকমই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে শহরজুড়ে এবং বিভিন্ন জেলাগুলিতে। তবে এই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্বেও প্রকৃতির এবং সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দীঘা সমুদ্র সৈকতে উপচে পড়ছে পর্যটকদের ঢল। দশমীর পর থেকে লক্ষ্মীপূজো পর্যন্ত এই ছুটিটাকেও দুর্গাপূজার শেষ হওয়ার মন খারাপের রেশ কাটিয়ে ওঠার জন্য দুদিন সমুদ্র সৈকতে ঘুরে এসে মন চাঙ্গা করতে চাইছেন পর্যটকরা। দুর্গাপূজা এবং সমুদ্র সৈকতের আনন্দকে এক সঙ্গে নিয়েই কাজে ফিরতে চাইছেন মানুষজন। এই কারণেই লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত দীঘা, তাজপুর এবং মন্দারমনির বেশিরভাগ হোটেল প্রায় ৭০ শতাংশ ভর্তি হয়ে গিয়েছে।

পুজো শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে হঠাৎ হওয়া বজ্রবিদ্যুৎ সহ মেঘের সঞ্চারে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় কলকাতা সহ জেলাগুলিতে। দেখা গিয়েছিল এই বৃষ্টিপাতের দরুন কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলো জলের তলায় চলে গিয়েছিল। অনেক দোতলা বাড়ির ড্রয়িং রুম পর্যন্ত জলের মধ্যে ছিল। এছাড়া হাসপাতাল ও অন্যান্য অফিসেও জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল। স্কুলগুলোকে বাধ্য হয়ে ছুটি দিতে হয়েছিল। অফিস যাত্রীদের অফিস যেতে অনেকটাই অসুবিধা সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। তবে পুজোর ৪-৫ দিন কোনরকমে আবহাওয়া ভালো থাকলেও, ফের দশমীর থেকে আবহাওয়া আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেশ কিছু পর্যটক তাদের আনন্দের রেশ উদযাপন করার জন্য সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে চলে গিয়েছেন।

এদিকে সমুদ্র উত্তাল অবস্থায় রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের এবং দীঘার পার্শ্ববর্তী হোটেলগুলোকে। মাঝ সমুদ্রে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়া বারণ করে দিয়েছে প্রশাসন। অন্যদিকে, দীঘার হোটেলগুলোর মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুজোর আগে বুকিং প্রায় ছিল না বলেই তাদের অনেকটাই মন খারাপ অবস্থা ছিল। কিন্তু পুজোর ৪-৫ দিন এবং পূজোর পরে আরো বেশি করে এই দুদিনে এতটাই বুকিং তারা পেয়েছে যে এখন ৭০ শতাংশ রুম বুকিং বললেই বলা চলে। দিঘা হোটেলের অ্যাসোসিয়েশনগুলির দাবি, পুজোর ৪ দিন সৈকতের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ছুটি কাটাতে ও পুজো দেখতে প্রায় ৮ লক্ষ পর্যটক ভিড় জমিয়েছিলেন। দীঘা সমুদ্র সৈকতের শুধু সমুদ্র নয়, এখন আরেকটি এক্সট্রা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে দীঘার জগন্নাথ মন্দির দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় আরো একটু বেশি হচ্ছে বলেই মনে করছেন হোটেল অ্যাসোসিয়েশনগুলো। যদিও পূজোর আগে বুকিং নেই বলে তাদের ব্যবসা অনেকটা মন্দা চলছিল কিন্তু পুজোর চার দিন এবং পূজোর পরের এই লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত বুকিং অনেকটাই হওয়ায় তাদের ব্যবসার মন্দাভাব দূরীভূত হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে, এই বছর প্রথম দিঘা জগন্নাথ মন্দিরে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেবী সুভদ্রাকে দুর্গা রূপে পূজা করা হয়েছে মন্দিরে। আর এই পুজো উপলক্ষে কলকাতায় যেরকম পূজো মণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়েছিল, ঠিক তেমনি দীঘার সমুদ্র সৈকতে জগন্নাথের মন্দিরে সুভদ্রার দুর্গা রূপে পূজা করার মুহূর্তকে উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এই পুজ উপলক্ষে মহালয়ার পর থেকে দশমী পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল মন্দির কর্তৃপক্ষের থেকে। দীঘা জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টিক কমিটি সদস্য তথা ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধা রমনদাস জানিয়েছেন, এই বিশেষ পুজো দেখতে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের ভিড় মন্দিরে উপচে পড়েছিল। নবমী রাত থেকেই উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে দফায় দফার বৃষ্টি হয়েছে এবং দশমীর দিন এই বৃষ্টির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এই সমস্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াকে উপেক্ষা করেও দর্শনার্থী এবং পর্যটক ভিড় জমিয়েছিলেন সমুদ্র সৈকতে এবং জগন্নাথ মন্দিরে। যদিও প্রশাসন থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল হোটেল গুলোতে এবং পর্যটকদের যাতে কোনরকম দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য সমুদ্র স্নানে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এবং উপকূল জুড়ে এবং সমুদ্র সৈকতের পাশে পুলিশের কড়া নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছিল প্রশাসন তরফে।

এদিকে দশমী একাদশী দ্বাদশী অর্থাৎ লক্ষী পূজা পর্যন্ত এই ভিড়ের পরিমাণ আরো বেড়েছে। পর্যটকরা ছুটির আমেজকে আরো একটু ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য পূজোর শেষ হয়ে যাওয়ার মন খারাপকে বিষন্নতায় না রেখে আরো দুটো দিন চুটিয়ে উপভোগ করে নিতে চাইছেন দৈনন্দিন কর্মজীবনে ফেরার আগে।

Join Group Join Group