সামনেই রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। আর এই জন্যই জোড়কদমে চলছে ভোটের তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নতুন ভোটার কার্ড দিলি এবং আরো ভোট সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে ভোট পরিষেবায় গতিশীলতা আনতে সচেষ্ট হলেন ডাক বিভাগ। একদিকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন করে খুব দ্রুত নতুন তালিকা প্রকাশ করার জন্য জেলারদের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে এবার ডাক বিভাগ নতুন ভোটারদের ভোটার কার্ড নির্দিষ্ট এড্রেসে পৌঁছে দেওয়ার কাজ আরো দ্রুত গতিতে করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন।
আগের নিয়ম অনুযায়ী ভোটার কার্ড পৌঁছতে সময় লাগত ১ মাসের মতন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে ডাক বিভাগ জানিয়েছেন, মাত্র ৫ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন ভোটারদের অ্যাড্রেস এ ভোটার কার্ড পৌঁছে যাবে। আরো আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
জানা যাচ্ছে, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) চালু হয়েছে যার মাধ্যমে ভোটার কার্ড বিলির কাজ আরো দ্রুততর হবে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং নির্বাচন কমিশনার ড. সুখবীর সিং সান্ধু ও ড. বিবেক জোশীর নেতৃত্বে। দ্রুত ভোটার কার্ড পৌঁছানোর প্রধান লক্ষ্য হলো নতুন ভোটারদের কাছে দ্রুত নির্ভরযোগ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এই নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্ড তৈরি থেকে শুরু করে ভোটারের নির্দিষ্ট ঠিকানায় কার্ড পৌঁছে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি রিয়েল টাইম নির্ভর করে করা হবে। ভারতীয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে ভোটার কার্ড পাঠানো হলেও ভোটাররা প্রতিটি ধাপে ধাপে মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারবেন প্রত্যেকটি আপডেট।
- পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ SI পরীক্ষার উত্তরপত্র জারি করা হয়েছে, নির্দিষ্ট লিঙ্ক ডাউনলোড করে দেখে নিন!
- ৩৯১ টি শূন্যপদে বিএসএফ জিডি কনস্টেবল নিয়োগ, জানুন আবেদন সংক্রান্ত পদ্ধতি?
- পোস্ট অফিস দিচ্ছে মাসিক ৯,২৫০ টাকা আয়ের সুযোগ, জানুন এই স্কিম সম্পর্কে!
- IRCTC new rules: রেলের টিকিটের সময়সূচি পরিবর্তনের সুযোগ কোনো এক্সট্রা ফি ছাড়াই।
- রাজ্যের স্কুলে ৮৪৭৭ অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ গ্রুপ সি ও ডি পদে, আবেদন সংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিত?
এই উদ্যোগকে আরো কার্যকরী করতে নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ আইটি মডিউল চালু করেছে, যা ECINet নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থা সরাসরি ভারতের ডাক বিভাগের ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস (এপিআই)-এর মাধ্যমে।
এই নতুন প্রক্রিয়া চালু হলে পুরনো ম্যানুয়াল ট্রাকিং প্রক্রিয়ার উপরে নির্ভর করতে হবে না। বরং নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় নিরাপদ ও দ্রুতগামী ডেটা পরিচালনা করা যাবে।
রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং কিভাবে কাজ করে?
এই প্রক্রিয়ায় কার্ড তৈরি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে EPIC-এর অবস্থান ট্রাক করা যায়, যাতে ভোটাররা তাদের কার্ডের অবস্থান কোথায় রয়েছে তা দেখতে পারেন। অর্থাৎ ভোটার কার্ডের স্ট্যাটাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও ভোটারদের ম্যাসেজ নোটিফিকেশন পাঠানো হয় প্রত্যেকটি ধাপ সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ECINet নামক প্ল্যাটফর্মে একটি আইটি মডিউল চালু করা হয়েছে, যেটি ভারতীয় ডাক বিভাগের API সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করা হয়েছে এর ফলে দ্রুত ও নিরবিচ্ছিন্ন ভোটার কার্ড বিতরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। পুরনো নিয়মের বদলে নতুন নিয়ম কার্যকর করার ফলে নিরাপদ তথ্য সুরক্ষাও উন্নত সেবা প্রদান করা যাবে।
নতুন ভোটার কার্ডের জন্য অনলাইনে কিভাবে আবেদন করবেন?
১) আবেদনকারীকে সর্বপ্রথম NVSP এর অফিসিয়াল পোর্টাল ভিজিট করতে হবে। বা জাতীয় ভোটার পরিষেবা পোর্টাল ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
২) এরপর সাইন আপ করতে হবে। সাইন আপ করতে ডানদিকে উপরের কোণে থাকা “Sign-Up” অপশনে ক্লিক করুন। এরপর মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি এবং ক্যাপচা কোড দিন।
৩) এরপর অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আপনার নাম, পাসওয়ার্ড এবং পাসওয়ার্ড নিশ্চিত করে একটি ওটিপি অনুরোধ করুন।
৫) আপনার মোবাইল ও ইমেইলে পাঠানো ওটিপি দিয়ে অ্যাকাউন্ট যাচাই করুন।
৬) মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা দিয়ে লগ ইন করুন, তারপর ফের ওটিপি দিয়ে যাচাই করুন।
৭) এরপর ফর্ম ৬ পূরণ করুন। নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য “Fill Form 6”-এ ক্লিক করতে হবে এবং আপনার ব্যক্তিগত, আত্মীয়, যোগাযোগ ও ঠিকানাসংক্রান্ত তথ্য ইনপুট করতে হবে।
৮) প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন।
৯) আবেদনপত্র ভালো করে যাচাই করে নিয়ে জমা দিন বা সাবমিট করুন।
ভোটার কার্ড হাতে পেতে দেরি হওয়ার অভিযোগ নতুন ব্যাপার নয়। ভোটার কার্ড পাওয়ার জন্য সাধারণ নাগরিককে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। নতুন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার ফলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডাক বিভাগ একসঙ্গে এই নতুন প্রয়াস চালু করার মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের অনেকটাই উপকৃত হবে।
উল্লেখ্য, ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শুধুমাত্র ভোটার কার্ড নয়, দেশের বড় মেট্রো শহরগুলোতে চালু হচ্ছে এক্সপ্রেস ডেলিভারি পরিষেবা। এর মাধ্যমে কলকাতা থেকে যদি কেউ চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ বা বেঙ্গালুরুদের চিঠি বা পার্সেল পাঠায়, তাহলে পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। এমন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জানা যাচ্ছে, ডাক বিভাগের এই আধুনিকরণের জন্য ৬০০০ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে খরচা হয়ে গিয়েছে। রিয়েল টাইম ডেলিভারি আপডেট, অনলাইন বুকিং ও পেমেন্ট সুবিধা, ওটিপি-ভিত্তিক সুরক্ষিত ডেলিভারি, ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম, স্পিড পোস্টে মিলছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এই নতুন পরিষেবা গুলো চালু করা হয়েছে। অতিরিক্ত ৫ টাকা ও জিএসটি দিয়ে রেজিস্ট্রি পরিষেবা বা ওটিপি-ভিত্তিক ডেলিভারির সুবিধাও পেয়ে যাবে সাধারণ নাগরিকরা। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র নিশ্চিত এড্রেসে ডেলিভারি হবে তা নয়, সরাসরি প্রাপকের হাতে ডেলিভারি করা হবে।
অর্থাৎ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং ডাক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এবার থেকে নতুন ভোটার কার্ড পাওয়ার জন্য এক মাসের মতন সময় অপেক্ষা করতে হবে না। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই প্রাপকের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যাবে ভোটার কার্ড। এই নতুন কার্যকরী ব্যবস্থা মাধ্যমে সাধারণ নাগরিক অনেকটা নিশ্চিত হতে পারবে।