বাড়িতে বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে আয় করার উপায়, মাসিক মোটা অংকের টাকা উপার্জন এর সহজ পথ।

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে ঘরে বসে অল্প মূলধন দিয়ে, আপনার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মাস গেলে আপনি মোটা টাকা উপার্জন করতে পারবেন। বর্তমান সময়ের যেভাবে চাকরির আকার অবস্থা রয়েছে, সেক্ষেত্রে অনেক অনেক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঘরে ঘরে বেকার চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই মূলধন সংগ্রহ করতে না পারার জন্য ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। আপনি কি জানেন ঘরে বসে একটু বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে আপনি অনেক রকম ব্যবসা শুরু করতে পারবেন, যার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বেকার চাকরিপ্রার্থীরাই নয়, গৃহবধূ, শিক্ষার্থী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরাও বাড়িতে বসে মাস গেলে মোটা টাকা আয়ের সুযোগ পেতে পারেন। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল যুগ, সোশ্যাল মাধ্যম কি কাজে লাগিয়ে আপনি অনেক রকম ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি ঘরে বসে ইন্টারনেট সহযোগে আপনি কোন কোন ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আপনিও যদি এমনই ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে প্রতিবেদনটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

১) ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজের সুবিধা: ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজ করলে সময় যেমন অনেকটাই নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং যাতায়াতের জন্য সময় অপচয় কম হয়, তার সাথে পরিশ্রম অনেক কম হয়। এইজন্য ঘর সংসারের কাজ করেও গৃহবধূ থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা এবং শিক্ষার্থীরাও এই কাজের সাথে যুক্ত হতে পারে। অনেকে চাকরি করেও পার্শ্ববর্তী এক্সট্রা আয়ের উৎস হিসাবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজ করতে পারেন।

২) অনলাইন টিউটরিং: বর্তমান যুগে অনলাইন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রকম কাজ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম কাজ হলো অনলাইন টিউটরিং। ডিজিটাল যুগে আপনি অনলাইন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাদান করতে পারেন। বিশেষ করে কোভিড এর সময় থেকে অনলাইন পড়াশোনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তারপর থেকেই অনেকে অনলাইন মাধ্যমে অর্থাৎ ফেসবুক বা youtube এ নিজের চ্যানেল করে পড়াশুনা সংক্রান্ত ভিডিও বানিয়ে থাকেন। এই ভিডিওর মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী অনেক কিছু শিখতে পারেন। এছাড়া অনলাইন মাধ্যমেও আপনি স্টুডেন্টদের টিচিং ক্লাস নিতে পারেন। অনলাইন টিউটরিং এর জন্য বিশেষ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। একটি কম্পিউটার, একটি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং পড়ানোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। আপনি গণিত, বিজ্ঞান, ভাষার মতো বিষয়গুলিতে অথবা কোডিং বা গ্রাফিক ডিজাইনের মতো বিশেষ দক্ষতার উপর একের পর এক সেশন বা গ্রুপ ক্লাস অফার করতে পারেন। এ কাজের জন্য শুরুতে খরচ অনেকটাই কম এবং শিক্ষার যেহেতু চাহিদা রয়েছে বিশেষ করে অনলাইন টিউটোরিয়াল একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।

৩) হোম বেকারি:
যদি আপনার বেকিংয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে এটিকে একটি ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে পারেন। এখন বিভিন্ন জায়গায় অল্প খরচেই কেক বানানোর ট্রেনিং দেওয়া হয়ে থাকে। আপনি যদি এরকম কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেক বানানোর ট্রেনিং শিখতে পারেন, তারপরে আপনার নিজের বাড়িতেই একটি বেকারি করে তুলতে পারেন। Facebook, instagram, ইউটিউবে পেজ তৈরি করে আপনি যদি আপনার বানানো কেকগুলোর ছবি দিয়ে প্রাইস উল্লেখ করে দিতে পারেন, তার সাথে আপনার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে দিলে অনেক গ্রাহকদের পছন্দ হলে আপনাকে অর্ডার করবেন তারা। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ অনেক কম টাকা লাগে।

আরোও পড়ুনঃ- পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে বিনিয়োগের জন্য যোগ্যতা, সুবিধা, সুদের হার সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত

৪) হস্তনির্মিত কারুশিল্প ব্যবসা: সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে অনেক সময় আমরা দেখতে পাই এমন কিছু পেজ রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের হাতের তৈরি কারুকার্য জিনিস দেখাচ্ছে এবং পছন্দ হলে তাদের স্ক্রিনে দেওয়া নাম্বারে কন্টাক্ট করে কিনতে বলছেন। আপনিও যদি এমন হস্ত নির্মিত বিভিন্ন জিনিস বানাতে পারদর্শী হয়ে থাকেন, অথচ একটা ঠিকঠাক প্লাটফর্ম পাচ্ছেন না বলে আপনার এই পারদর্শিতাকে কাজে লাগাতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনি আপনার শিল্পকর্ম গুলি যেমন গয়না, মোমবাতি, চিত্রকর্ম, বা বেতের বোনা জিনিসপত্র যাই হোক না কেন, এমন সমস্ত জিনিস আপনি বানিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও স্থানীয় শিল্প মেলায় আপনার সৃষ্টি বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

৫) ফটোগ্রাফি ব্যবসা:
যদি আপনার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে ফটোগ্রাফি ব্যবসা থেকে আপনি আয়ের উৎস খুঁজে পেতে পারেন। বিবাহ, অনুষ্ঠান, প্রতিকৃতি, পণ্য ফটোগ্রাফি, এমনকি স্টক ফটোগ্রাফির কাজ অনায়াসে করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বর্তমানে বিভিন্ন অকেশনে কফি মগ, ফটো ফ্রেম এর ওপরে বিভিন্ন ব্যক্তির ফটো দিয়ে উপহার দেওয়া খুব চল রয়েছে। আপনি যদি ফটোগ্রাফির ব্যবসা করেন তাহলে অকেশনে অনেকটা লাভ করতে পারবেন।

৬) টিফিন সার্ভিস:
যারা রান্না করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য টিফিন সার্ভিস একটি চমৎকার ব্যবসার উৎস হতে পারে। আপনি বিভিন্ন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাবার তৈরি করে সেগুলি সরবরাহ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
বিশেষ করে বর্তমানে হোম ডেলিভারির প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে। আপনি এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারেন আপনার ব্যবসার প্রচারের মাধ্যমে হিসাবে।

৭) ডেটা এন্ট্রির কাজ:
বিনা বিনিয়োগে যারা অনলাইন কাজ খুঁজছেন তাদের জন্যে ডেটা এন্ট্রি হলো অন্যতম মাধ্যম। আপনি যদি ভালো লেখালেখি জানেন কিংবা এডিট কাজ জানেন তাহলে পার্ট টাইম কাজ করতে পারবেন।
এই ধরনের কাজ করার জন্য আপনার কাছে থাকতে হবে একটি ল্যাপটপ এবং থাকতে হবে কম্পিউটার সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান। বাড়িতে বসে কাজ করে আপনি প্রতি ঘন্টায় ৩০০ থেকে ৩ হাজার টাকা রোজগার করতে হয় সুযোগ পাবেন।

৮) ট্রাভেল এজেন্সি:
প্রত্যেকটি মানুষ অবসর সময়ে ঘুরতে যেতে পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যস্ততার জন্য ভ্রমণ ট্যুর কিভাবে পরিকল্পনা করবেন সেটা সময় নিয়ে করে উঠতে পারেন না। এজন্য সেরা ভ্রমণ পথের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এবং মানুষের ভ্রমণ গন্তব্যকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য বিভিন্ন পর্যটন এজেন্সি রয়েছে, যারা আপনাকে অল্প দিনের মধ্যে একটা সুন্দর ট্যুর গাইড আপনাকে দিয়ে দেবে। আপনিও যদি এরকমই ট্রাভেল এজেন্সির করতে পারেন তাহলে অল্প বিনিয়োগ করে ভালো ব্যবসা দিতে পারবেন। তবে এই ব্যবসা যাওয়ার জন্য পর্যটন ব্যাপারে আপটুডেট থাকতে হবে।

৯) কুরিয়ার সার্ভিস:
লজিস্টিক এমন একটি পরিষেবা যা সারা বছর ধরে ব্যবসা করে। কর্মীদের নিয়োগ করুন, একটি সেটআপ করুন এবং আপনি আপনার কুরিয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১০) ফ্রিল্যান্সিং: বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ একটি অন্যতম প্যাসিভ ইনকাম। বর্তমানে অনেক পুরুষ ও মহিলা এই কাজের মাধ্যমে পূর্ণ ক্যারিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আপনি যেকোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের পাশাপাশি। এর জন্য আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন , ডিজিটাল মার্কেটিং ,ভিডিও এডিটিং , ওয়েব ডেভলপমেন্ট শিখে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।

১১) ইউটিউবে ব্লগ করে: আপনার যদি ব্লগ করার আগ্রহ থাকে, ছোট ছোট মুহূর্তকে ক্যাপচার করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে আপনার এই ইচ্ছেটুকুই আপনাকে অনেক জনতার কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে এই সোশ্যাল মিডিয়া। আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবন বা ভ্রমণ ভিডিও কিংবা রান্নার ভিডিও বা গার্ডেনিং এর ভিডিও করে ইউটিউবে একটি পেজ করে সেখানে প্রতিদিন দিতে থাকেন এবং তার সাথে আপনার কিছু মূল্যবান বক্তব্য বা আপনার ভালো লাগার কথা শেয়ার করেন, আপনার এই ভিডিও যত মানুষের কাছে পৌঁছাবে অর্থাৎ ভিউজ বাড়লে ইউটিউব এর পক্ষ থেকে আপনি মাসে আয় করার সুযোগ পাবেন।

অর্থাৎ ঘরে বসে অনলাইন মাধ্যমে কাজের জন্য আপনার প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি এন্ড্রয়েড ফোন বা ল্যাপটপ। এর সাথে দ্রুত গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ। আপনার যেকোনো একটি শিল্পকর্মের প্রতি দক্ষতা থাকতে হবে, যে দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আপনি উপার্জন করবেন। আর সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হল কাজের প্রতি ধৈর্য এবং একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা। অনলাইন মাধ্যমে কাজের জন্য এই ধৈর্য এবং একনিষ্ঠতা থাকা খুবই প্রয়োজন। কাজের প্রতি ফোকাস এবং সময়ানুবর্তিতা ঘরে বসে অনলাইন মাধ্যমে কাজকে আরো সুদূরপ্রসারী করে তুলবে।

Join Group Join Group