“বিবাহ” অর্থাৎ দুজন মানুষের শুভ পরিণয় যা একটি নতুন জীবনের সূচনা করে। দুটি মানুষের হৃদয় বিবাহ রীতির মাধ্যমে এক সুতোর বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যদিও সামাজিক মতে বিবাহ করলেও আইনি মতে রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ করে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে বিবাহ নিবন্ধন সার্টিফিকেট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? সামাজিক বিবাহ ছাড়াও ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন না করলে আপনি কি কি সমস্যায় পড়বেন? এই সমস্ত তথ্যই থাকছে আজকের এই প্রতিবেদনে।
যদিও গ্রামের দিকে কিংবা শহরেও এখনোও অনেক ব্যক্তিদের মধ্যে বিবাহ সার্টিফিকেটকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়না। তারা শুধুমাত্র সমাজ এবং জনগণের উপরেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখনো পর্যন্ত অনেক বিয়েতেই দেখা যায় যেখানে শুধুমাত্র সামাজিক মতে বিয়ে হয়েছে অথচ তাদের কোন আইনি সার্টিফিকেট নেই। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা নিয়ে আসা দরকার, যাতে বিয়ের মতন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তারা হেলাফেলা না করে এটিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উৎসাহী হয়।
বিবাহ নিবন্ধন পত্র বা ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট কি:-
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট হল একটি সরকারী নথি যা রেজিস্ট্রার কর্তৃক অনুমোদিত। আপনি দুটি নিয়মে রেজিস্ট্রশন করতে পারেন। হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ অথবা বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ এর অধীনে নিবন্ধিত করা যেতে পারে। উভয় ধরণের রেজিস্ট্রশন সার্টিফিকেট একটি দম্পতির বিবাহিত হওয়ার বৈধ প্রমাণ হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট শুধুমাত্র একটি বিয়েতে আইনি স্বীকৃতি দেয় না, এই সার্টিফিকেট বিয়ে পরবর্তী সময়ে প্রতিকূল অবস্থাতে অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হিসেবে পরিগণিত হয়। এছাড়াও বিবাহ সম্পর্কে আইনি সার্টিফিকেট বিবাহ জীবনে নিরাপত্তা প্রদান করে। স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুতে সম্পত্তির অধিকার দাবি করাতেও ম্যারেজ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন রয়েছে ।
আরোও পড়ুন:- এডুকেশনাল লোন চাইছেন? কোথায় এপ্লাই করলে এডুকেশনাল লোন সহজেই পাবেন? জানুন বিস্তারিত!
ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবে:-
১) দুজন ব্যক্তির তরফ থেকে আলাদা আলাদা বিয়ের কার্ড লাগবে।
২) স্বামী ও স্ত্রীর বয়সের প্রমাণপত্র, যেমন জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, আবাসিক সার্টিফিকেট অথবা এসসি/এসটি সার্টিফিকেট।
৩) বসবাসের প্রমাণপত্র যেমন রেশন কার্ড, বিদ্যুৎ বিল, নির্বাচনী কার্ড, টেলিফোন বিল, পাসপোর্ট বা আধার কার্ড।
৪) পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৫) স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের পক্ষে নির্ধারিত ফরম্যাটে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে পৃথক হলফনামা, যাতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে।
৬) স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ বর্তমান বিয়ের আগে ডিভোর্স হলে বিবাহবিচ্ছেদের সার্টিফিকেট।
৭) পূর্ববর্তী পত্নী মারা গেলে মৃত্যু সনদ পত্র।
৮) যদি স্বামী/স্ত্রীর কেউ বিদেশী নাগরিক হন, তাহলে বৈবাহিক অবস্থা সার্টিফিকেট
বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া:-
বর্তমানে অফলাইন এবং অনলাইন দুটি মাধ্যমেই বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া আপনি করতে পারবেন। প্রথমে অফলাইন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা যাক
অফলাইন মাধ্যমে:-
১) স্বামী স্ত্রী দুজনকেই সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে যেতে হবে। এছাড়া কোন আইনি এডভোকেটের মাধ্যমে বিবাহ স্থানে অথবা যেখানে স্বামী-স্ত্রী থাকেন সেখানেও বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।
২) আইনি বিবাহ আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ফর্মটিতে স্বাক্ষর করতে হবে। যে সমস্ত ডকুমেন্ট লাগবে সেই ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। এরপর ম্যারেজ রেজিস্টার এ সমস্ত নথিপত্র যাচাইকরণ করার পরে আপয়েন্টমেন্ট এর জন্য একটি দিন ফিক্সড করবেন।
৩) যদি বিবাহটি বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় হয়, তাহলে প্রায় ৬০ দিন সময় লাগতে পারে এবং হিন্দু বিবাহ আইনের ক্ষেত্রে, আবেদনের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগবে।
৪) দম্পতির উভয় পক্ষের তিনজন ব্যক্তি স্বাক্ষর করার জন্য প্রয়োজন হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনে উভয় পক্ষে তিনজন সাক্ষীকে উপস্থিত থাকতে হবে।
অনলাইন পদ্ধতি:-
১) আপনি যে রাজ্যের বাসিন্দা, সেই রাজ্যের বিবাহ নিবন্ধন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২) এরপর আপনার জেলা নির্বাচন করুন এবং আপনার এবং আপনার স্ত্রী/স্বামীর বিবরণ এবং আপনার বিবাহের বিবরণ জমা দিন।
৩) নিবন্ধন ফর্ম ফিলাপ করুন সঠিক তথ্য দিয়ে, সাথে ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করুন। এরপর আপনি রেফারেন্স নম্বর এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাবেন। নির্দিষ্ট দিনে আপনাকে সংশ্লিষ্ট সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা করতে হবে অনলাইনে পাওয়া রসিদ কপি নিয়ে।
ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধাগুলো কি কি:-
ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন করার অনেক রকম সুবিধা রয়েছে, বরং এটি না করে যদি শুধুমাত্র সামাজিক বিয়ে করেন তাহলেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
১) যদি আপনারা অর্থাৎ স্বামী স্ত্রী দুজনে বিয়ের পরবর্তী সময়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক হন, সেই ক্ষেত্রে ভিসার প্রয়োজন পড়বে। পাসপোর্ট তৈরি করতে হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের একটি বৈধ বিবাহ শংসাপত্র অর্থাৎ ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন পড়বে নয়তো আপনি ভিসা বা পাসপোর্ট পাবেন না। এছাড়া বিয়ের পরবর্তী সময়ে যদি একসাথে কোন সম্পত্তি কিনতে চান তাহলেও ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়বে। এমনকি গৃহঋণের জন্য যদি আবেদন করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলেও ম্যারেজ সার্টিফিকেটে প্রয়োজন পড়বে।
২) স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পরে একজন অপরজনের সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাওয়ার জন্যেও ম্যারেজ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়বে।
৩) জীবন বীমা নমিনি, যদি স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে করে থাকে, তবে একজনের মৃত্যুর পরে অন্যজনের সেই অর্থ দাবি করার সময়ে ম্যারেজ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে।
৪) বিবাহ পরবর্তী সময়ে যদি কোন প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে ডিভোর্স করার সময় বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত হবে, যেটি ডিভোর্স প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত ও সহজ করবে।
৫) আইনি বিচ্ছেদের পরে বাচ্চার দায়িত্ব নিতে হলে ম্যারেজ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
অর্থাৎ সামাজিক মতে বিবাহ ছাড়াও আইন অনুযায়ী ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই প্রত্যেক দেশের নাগরিককে এই ম্যারেজ সার্টিফিকেট কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা প্রত্যেকের জানা আবশ্যিক দরকার। যতটা সামাজিক বিয়েকে মান্যতা দেওয়া দরকার, ঠিক ততটাই বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি হিসেবে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই এটাকেউ সমান মান্যতা দেওয়া উচিত।