কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন পে-কমিশন যেমন কার্যকর করা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে এবং বেতন বৃদ্ধি করা হয়েই থাকে, কিন্তু বেসরকারি কর্মীদের জন্য শেষ পেনশন বৃদ্ধি করা হয়েছে ১১ বছর আগে। এই নিয়ে অনেক সময় বেসরকারি শ্রমিক সংগঠনরা আন্দোলনে সরব হয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন ও আবেদন জানিয়েছেন। যদি এত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের সে বিষয়ে কোনো কর্ণপাত হয়নি, তবে শেষ পর্যন্ত দীপাবলীর আগেই বেসরকারি কর্মচারীদের পেনশন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সাড়ে সাত গুণ পেনশন বৃদ্ধি করার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলো আবেদন জানিয়েছেন, তবে দেখা যাক কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কত শতাংশ অনুমোদন পাওয়া যায়।
কেন্দ্রীয় সরকার বেসরকারি কর্মচারীদের পেনশন বৃদ্ধি নিয়ে খুব শীঘ্রই সুখবর দিতে চলেছে। আগামীকাল সোমবার পেনশন বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠক হতে চলেছে। যদিও এই বৈঠক দুদিন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দুদিনের পরিবর্তে একদিনেই বৈঠক সারার কথা বলেছেন।
শ্রমমন্ত্রকের আওতাধীন ইপিএফও এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সোমবার দিন দিল্লিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যদিও, শনিবার এবং রবিবার বেঙ্গালুরুতে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সোমবারের বৈঠকে ইপিএফের ন্যূনতম পেনশন বৃদ্ধি করার অনুমোদন দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার তথা ইপিএফও পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুখ মাণ্ডব্য।
বর্তমানে একজন ইপিএফ পেনশন গ্রাহক মাসে ন্যূনতম ১০০০ টাকা পেনশন পান। বর্তমান সময় মুদ্রাস্ফীতির হারের নিরিখে এই পরিমাণ অনেকটাই স্বল্প। দীর্ঘদিন ধরেই সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি এই বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে। শ্রমিক সংগঠন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নরেন্দ্র মোদিকে সুপারিশও জানিয়েছিলেন। তবে এই ব্যাপারে পেনশন বৃদ্ধি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রায় ১১ বছর বাদে প্রত্যেক মাসে কর্মীর ইপিএফএর ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ বাড়তে চলেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় এটা একটি সুখবর।
২০১৪ সালে শেষবারের মতন বেসরকারি শ্রমিকদের জন্য ১০০০ টাকা পেনশনের সীমা নির্ধারণ করে সিবিটি। পরবর্তী এক দশকের বেশি সময়ে এর কোনও পরিবর্তন করেনি কেন্দ্র। উল্লেখ্য, ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ খুব কম হওয়ার কারণে এই নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। ইপিএফওর অন্তর্ভুক্ত ‘এমপ্লোয়িজ় পেনশন স্কিম’-এর (ইপিএস) টাকা বাড়ানোর দাবি তুলেছিল তারা। যদিও তাদের দাবি মতন ৭,৫০০ টাকা পেনশন করার কথা আবেদন জানিয়েছিল বেসরকারি শ্রমিক সংগঠন।
উল্লেখ্য, যে কোন পেনশনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করার জন্য একটি সূত্র ব্যবহার করা হয়। ইপিএফও পেনশনের এর ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট সূত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেটা হলো পেনশনযোগ্য বেতন X পেনশনযোগ্য পরিষেবা/৭০। এর মধ্যে পেনশনযোগ্য বেতন বলতে একজন শ্রমিকের অবসরের সময়ে শেষ ৬০ মাসের মূল বেতনকে বোঝায়। এবং ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতাকে হিসাব করা হয়। এছাড়া পেনশন পেতে হলে একজন কর্মীর অন্তত 10 বছর চাকরির জীবনে অতিবাহিত করতে হবে। এমনটা জানিয়েছে সিবিটি। এই নিয়ম অনুসারেই ইপিএফও পেনশন হিসাব করা হয়।
জানা যাচ্ছে, শ্রমিক সংগঠনগুলির ৭৫০০ টাকা বাড়ানোর দাবি মানতে নারাজ সিবিটি। তারা জানিয়েছেন, ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ সাড়ে সাত গুণ বৃদ্ধির পরিবর্তে ২,৫০০ টাকা বাড়ানো হবে। এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা। তবে পেনশন বৃদ্ধির পরিমাণ অনুমোদন দিলেও তা কার্যকর করার জন্য অর্থ মন্ত্রকের চূড়ান্ত অনুমোদন দরকার। তবে আশা করা যায়, সোমবারের বৈঠকে সবুজ সংকেত পেলেই অর্থ মন্তকের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ শেষের আগেই বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের পেনশন বৃদ্ধি পাবে, তা বলাই বাহুল্য।