জমি ক্রয় বিক্রয় নিয়মে আমূল পরিবর্তন, জমি রেজিস্ট্রেশনে ২০২৫-এর শেষেই আসছে নতুন নিয়ম?

জমি ক্রয় বিক্রয় খুবই জটিল নিয়ম কানুন সম্পন্ন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। জমি কেনা বেচার পদ্ধতিটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জমির খতিয়ান ও নকশা যাচাই করা দলিল, মিউটেশন এবং খাজনার কাগজপত্র পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্রসেসটা শুরু হয়। এজন্য অবশ্যই একজন আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। একজন ক্রেতাকে অবশ্যই বিক্রেতার জমির সকল আইনি কাগজপত্র আছে কিনা সেটাও যাচাই করে নেওয়া দরকার এবং এই সমস্ত প্রসেস শেষে সবথেকে যেটি আসল কাজ সেটি হল জমির রেজিস্ট্রেশন করা। জমির রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে রেজিস্ট্রেশনের খরচ (স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি, ভ্যাট, এআইটি) পরিশোধ করা প্রয়োজন, এরপর ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাক্ষীদের সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে উপস্থিত থেকে সঠিক কাগজপত্রসহ বিক্রয় দলিলে স্বাক্ষর করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, জমিটি ক্রেতার নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। 

যদিও বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি কাজকর্ম ডিজিটাল মাধ্যমে করা শুরু হয়েছে, তবে এখনো পর্যন্ত ভারতের সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া পুরনো পদ্ধতি অর্থাৎ ১৯০৮ সালের পুরনো রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে করা হচ্ছে। যত যুগ এগোচ্ছে ততই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি কর্মকাণ্ডকে ডিজিটাইলেশন পদ্ধতিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার জমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিকে ডিজিটাল মাধ্যমে করার কথা চিন্তাভাবনা করেছেন। এতদিন ভারতের সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের যে পুরনো পদ্ধতি চালু ছিল, সেটি ছিল কাগজ-কলম নির্ভর, সময় সাপেক্ষ এবং দালাল নির্ভর একটি প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় জমি ক্রেতা বিক্রেতাদের। এছাড়াও দালাল ও ঘুষের অভিযোগও কানাঘুষো শোনা যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২৫ সালের “Registration Bill” নামক নতুন খসড়া বিলের মাধ্যমে নতুন জমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু হলে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।

নতুন Registration Bill চালু করার মূল উদ্দেশ্য হল:-

১) ভারতবর্ষের জমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিকে অনেক সহজ করে তোলা। 

২) গোটা দেশে এক জাতীয় ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু করা। অর্থাৎ One Nation, One Registry নীতি চালু করার মাধ্যমে গোটা দেশে একই পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করা। 

৩) অনলাইন মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন প্রসেসকে আনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।

৪) জমি সংক্রান্ত ঘুষ, জালিয়াতি, দুর্নীতির হার অনেকটাই কমবে। অনলাইনে জমি রেজিস্ট্রেশন করলে কোন রকম দালালের প্রয়োজন হবে না।

৫) রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে সময় অপচয় না করে বাড়িতে বসে অনলাইন মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রেশন করার ফলে সাধারণ নাগরিকদের সময় বাঁচবে, সেই সাথে ঝামেলাও অনেকটাই কমবে।

৬) অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হলে ডিজিটাল কপি এবং ভিডিও প্রমাণ থাকবে। যার ফলে কোনরকম মিথ্যে জমি সংক্রান্ত মামলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। 

আরোও পড়ুন:- SBI তে জুনিয়র অ্যাসিসিয়েট পদে ৫১৮০ শূন্যপদে নিয়োগ, জানুন আবেদন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি?

নতুন জমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে কোন কোন নিয়ম পরিবর্তন হবে:- 

আপনি এখন থেকে জমি রেজিস্ট্রেশন করতে হলে আপনাকে কোন রেজিস্ট্রেশন অফিসে পায়ে হেঁটে যেতে হবে না, ঘরে বসেই আপনি অনলাইন মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রেশন করার সমস্ত রকম সুযোগ পাচ্ছেন। অনলাইন মাধ্যমে ডকুমেন্ট আপলোড, ভেরিফিকেশন, সিগনেচার এবং ফি পেমেন্ট করার সুযোগ পাবেন। প্রক্রিয়া শেষে আপনি ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কপিও পেয়ে যাবেন। এছাড়া ব্যক্তিগত পরিচয় প্রমাণের জন্য জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় ক্রেতা ও বিক্রেতার আধার এবং বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করা হবে, যার ফলে  জালিয়াতি অনেকটাই কমবে। প্রতিটি জমির প্রকৃত মালিকের রেকর্ড ডিজিটাল আকারে সংরক্ষিত থাকবে। ডিজিটাল পেমেন্ট করার সময় ভিডিও রেকর্ডিং করা বাধ্যতামূলক করা থাকবে, এবং নগদ অর্থ লেনদেনের পরিবর্তে ইউপিআই লেনদেন করা হবে, যার ফলে একটা ডিজিটাল রেকর্ড থাকবে লেনদেনের। 

কেন্দ্রীয় সরকারের এই one nation, one registry নীতি চালু করার ফলে রাজ্য ভেদে জমি রেজিস্ট্রেশনের আলাদা আলাদা নিয়ম থাকবে না। সারা দেশে একই নিয়মে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এর ফলে এক রাজ্যে বসে আপনি অন্য রাজ্যের জমি রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। তার ফলে সময় বাজবেএবং ঝামেলা কমবে অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনেক সহজ সরল হয়ে যাবে। জমির সমস্ত রকম তথ্য ডিজিটাল প্লাটফর্মে রেকর্ড থাকবে, যেটি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। 

খসড়া রেজিস্ট্রেশন বিল ২০২৫ তৈরি হয়ে গেছে এমনটা জানা যাচ্ছে। ২৫ শে জুন ২০২৫ পর্যন্ত জনসাধারণের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৫ এর শেষের দিকে সংসদে এই নতুন বিল পাস করার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ এর শেষের দিকে নতুন বিল বাস্তবায়ন হওয়ার আশা দেখা যাচ্ছে। 

রেজিস্ট্রেশন বিল আইন পাস হলে এবং নতুন জমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু হলে সাধারণ নাগরিকদের জমি কেনা বেচা প্রক্রিয়া এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনেক সহজতর হয়ে যাবে। সেই সাথে দুর্নীতি ও জালিয়াতির হার অনেকটাই হ্রাস পাবে এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।

Leave a Comment

Join Group Join Group